প্রতিহিংসা এবং মোবাইল এর লোভের শিকার হয়ে তৌহিদ খুন হয়: আসামী আটক
ডেস্ক রিপোর্ট
আপনাকে এভাবে আঘাত কে করতে পারে! আঘাতপ্রাপ্ত তৌহিতকে প্রশ্নটি করেছিলেন ময়মনসিংহের ৩ নং পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ ইন্সপেক্টর দুলাল আকন্দ। খুব কষ্টে মৃদু কন্ঠে তৌহিদ বলেছিল,কে আর করতে পারে, আমার মোবাইল যে নিতে চায় সে। এরপর আর কোন তথ্য দিতে পারেনি সে। ক্লু রেখে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র তৌহিদুল ইসলাম যে ময়মনসিংহ শহরের তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকার জনৈক সোলায়মান সাহেবের বাসার ভাড়াটিয়া। তাঁর গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া থানার রামেশ্বরপুর গ্রামে।
গত ১ মে ভোররাতে নির্মমভাবে খুন করা হয় তৌহিদকে। এরপর পরই কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ শহরে তৌহিদের হত্যাকারীকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে মানব বন্ধন করে। তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে কয়েকটি সংগঠন সহ সাধারন শিক্ষার্থীবৃন্দ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র নিন্দা ও হত্যাকারীকে গ্রেফতার করাসহ শহরের সামাজিক নিরাপত্তার দাবি জানানো হয়।
এদিকে নিহত তৌহিদের বাবা মোঃ সাইকুল ইসলাম এর অভিযোগের ভিত্তিতে কোতোয়ালী থানার মামলা নং-০২, তারিখ-০১/০৫/২০২০ ইং ধারা-৩০২ পেনাল কোড রুজু হয়।
এ নিয়ে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে এবং ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তৌহিদের হত্যাকারীকে আটক করা হয়।
আজ এক প্রেস ব্রিফিং এ ময়মনসিংহ পুলিশসুপার মোঃ আহমার উজ্জামান নিহত তৌহিদ কি করে হত্যার শিকার হয় তা তুলে ধরেন এভাবে, গত ইং ০১/০৫/২০২০ তারিখ ময়মনসিংহ শহরের তিনকোনা পুকুরপাড় এলাকার জনৈক সোলায়মান সাহেবের বাসার ভাড়াটিয়া জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তৌহিদুল ইসলাম ভোর রাতে অজ্ঞাত ব্যক্তি কর্তৃক আঘাত প্রাপ্ত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে মৃত্যুবরণ করে।
এই বিষয়ে ভিকটিমের পিতা মোঃ সাইকুল ইসলাম এর অভিযোগের ভিত্তিতে কোতোয়ালী থানার মামলা নং-০২, তারিখ-০১/০৫/২০২০ ইং ধারা-৩০২ পেনাল কোড রুজু হয়। ভিকটিম একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। তার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জেলার গোয়েন্দা শাখা এবং থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। সদর সার্কেল এবং জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ মো: শাহ কামাল আকন্দ ব্যক্তিগতভাবে তা তদারকী করেন।
প্রাথমিকভাবে সংঘটিত ঘটনাটি চুরি সংক্রান্ত প্রতিয়মান হওয়ায় ডিবি এবং থানা পুলিশ যৌথ অভিযানের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মূল ঘাতক ১। মোঃ আশিকুজ্জামান আশিক (২৭), পিতা মৃত-সোহেল মিয়া, মাতা-মোছাঃ আনোয়ারা বেগম আনু, সাং- বাসা নং-১৯২, গোহাইলককান্দি(জামতলামোড়), প্রযত্নে-সেকান্দর মিয়া, পিতা-লাল মিয়া, সাং-ঐ, উভয় থানা-কোতোয়ালী, জেলা-ময়মনসিংহকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। উক্ত আসামী একজন এলাকার পেশাদার চোর ও মাদক সেবী। ঘটনার ২ দিন আগে ভিকটিম তৌহিদের সাথে তার ভাড়াটিয়া বাসার গলি রাস্তার মাথায় রমজান মাসে সিগারেট খাওয়া নিয়ে ভিকটিম তার মোবাইল হাতে নিয়ে শ্বাসাইতে থাকে এবং উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ড হয়।
তখন থেকেই সে মোবাইলটি নেওয়ার জন্য লোভ হয়। ভিকটিম বাসায় গেলে সে পিছনে পিছনে বাসায় গিয়ে তার রুম দেখে আসে। ঘটনার দিন রাত অনুমান ০৩.০০ ঘটিকায় সে বাসার ছাদ দিয়ে মোবাইল চুরি করতে আসলে, ভিকটিম তাকে ধরে ফেলে। উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে পাশে থাকা রড দিয়ে ভিকটিমকে আঘাত করে রক্তাক্ত করে পালিয়ে যায়। ইং ০৩/০৫/২০২০ তারিখ বিকাল আসামীকে আকুয়া বোর্ড এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
তার দেখানো মতে হত্যাকান্ডের সময় পরিহিত রক্তমাখা প্যান্ট এবং গেঞ্জি গাজীপুর শ্রীপুর এমসি বাজার হতে এবং ইং ০৪/০৫/২০২০ তারিখ পুকুর হতে রড উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।
যদি কেউ কোন অনিরাপদ মূলক বিষয়ে আঁচ করতে পারেন তবে তা সাথে সাথে পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করার জন্য প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে জেলা পুলিশসুপার সবাইকে আহবান জানান।
প্রেস ব্রিফিং এ উপস্থিত ছিলেন, এএসপি হুমায়ুন কবির, এএসপি আল আমিন, ডিবি ওসি শাহ কামাল আকন্দ,কোতোয়ালি থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম।।