ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের মূল কেন্দ্র রাজশাহীতে আঘাত হানেনি
এম,রায়হান আলী রাজশাহী থেকেঃ
রাজশাহীতে ঝড় হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাতের এই ঝড়ে রাজশাহীর অন্তত ১৫ শতাংশ আম গাছ থেকে ঝরে পড়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গণমাধ্যমে এমন তথ্যই দিয়েছে।
অবশ্য জেলা প্রশাসক হামিদুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, আম ঝরেছে ২০ শতাংশ। এদিকে গাছের আম ঝরে পড়ায় চাষিদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। তারা বলছেন, এবার এমনিতেই আমের ফলন কম। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দাম পাওয়া নিয়েই ছিলেন অনিশ্চয়তায়। তার ওপর ঝড়ে আম ঝরে পড়ায় ফলনও কমে গেল। এতে তারা লোকসানের মুখে পড়বেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুল হক বলেন, রাতেই বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে আমরাই জেলা প্রশাসককে জানিয়েছিলাম যে ২০ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। তবে সকালে আমরা বিভিন্ন বাগান পরিদর্শন করে দেখছি ক্ষতির পরিমাণ আরেকটু কম। শহরে ১০ শতাংশ এবং চারঘাট উপজেলায় এসে ১৫ শতাংশ আম ঝরে পড়ার দৃশ্য দেখছি। বাঘা উপজেলায় বাগান বেশি। সেখানে যাব। তারপর আম ঝরে পড়ার প্রকৃত চিত্রটা বলতে পারব।
যোগাযোগ করা হলে বাঘা উপজেলার বাউসা গ্রামের আম চাষি ফরিদুল ইসলাম বলেন, বাগানে ঢিলের মতো আম পড়ে আছে। তারা কুড়াচ্ছেন। আচারের জন্য দুই থেকে পাঁচ টাকা কেজি দরে এসব আম বিক্রি করতে হবে। আর কয়টা দিন গেলেই এসব আম পরিপক্ক হয়ে যেত। এখন বাগানের ফলন কমে যাবে। এবার আমে এবার লাভ হবে না বলেই মনে করছেন তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা শামসুল হক বলেন, আম ঝরে গেলে তো ফলন কমবেই। এখন চাষিরা যদি আমের ভালো দাম না পান তাহলে হয়তো এবার তারা ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাই আমের যেন সঠিক মূল্য পাওয়া যায় তার জন্য যা যা করা দরকার আমাদের করতে হবে।
তিনি জানান, ঝড়ে রাজশাহীর অন্য কোনো ফসলের তেমন ক্ষতি হয়নি। মাঠে পাকা ধান আছে। সেগুলো মাটিতে শুয়ে গেছে। তবে ধান পেকে যাওয়ায় চাষিরা তা এখন কেটে নেবেন। তাই ধানের ক্ষতি হবে না। তবে কিছু ধান ঝরে যেতে পারে। মাঠের সবজির কোনো ক্ষতি হবে না।
বুধবার সন্ধ্যারাত থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে শুরু হয় আম্ফানের তাণ্ডব। সারারাত এটি দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তাণ্ডব চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার পর এটি রাজশাহীতে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, আম্ফানের মূল কেন্দ্র রাজশাহীতে আঘাত করেনি। তবে বৃহস্পতিবার রাত ২টা ৫৫ মিনিট থেকে ২টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ৫৯ কিলোমিটার। এটি অবশ্য ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রায় পড়ে না। বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটারের ওপরে থাকলে তাকে ঘূর্ণিঝড় বলে। রাজশাহীতে ঘূর্ণিঝড়ের একধাপ নিচের মাত্রার ঝড় হয়েছে। সেইসঙ্গে বৃষ্টিপাতও হয়েছে। বুধবার ভোর ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮১ মিলিমিটার।