১৯৭১ সালে দেশকে শত্রুর রাহু মুক্ত করতে দুই বছরের একমাত্র শিশুকন্যা নাছিমা আক্তার ও স্ত্রী হাজেরা বেগমকে বাড়িতে রেখেই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন ২২ বছরের যুবক জামাল উদ্দিন।
যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর মোকাবেলা করতে গিয়ে শহীদ হন তিনি। এতিম ও বিধবা হয়ে পড়ে সন্তান ও স্ত্রী। মা হাজেরা আক্তার পরে অন্যত্র সংসার সাজালেও দাদার আশ্রয়ে বড় হওয়া নাছিমা আক্তারের বিয়ে হয় এক সময়।
দাদা নিজেই জীবিত থাকাকালীন তার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ছেলের সম্পত্তি তার নাতনিকে ভাগ করে দিয়ে যান। পরে দাদাও মারা যান। নিজে স্বামীর বাড়ি থাকায় দূর থেকে এসব সম্পত্তির দেখাশোনা করা সম্ভব ছিল না নাছিমার পক্ষে। তাই অনেকটা বিশ্বাস করেই চাচাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন তার জমি দেখাশোনা করার। এটাই যেন কাল হয়ে উঠলো।
এখনতো সমাজপতিদের সঙ্গে নিয়ে ভাতিজির সম্পত্তি হরণের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে তার চাচারা। শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের পৈত্রিক সম্পত্তির অধিকার বঞ্চিত করার অভিযোগও চাচাদের বিরুদ্ধে।
নিজের অধিকার রক্ষায় সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন ফল পাননি। থানায় দিয়েছেন অভিযোগ। জমি দাবি করতেই মারধরের শিকার হন নাছিমা আক্তার। মেরে ফেলারও হুমকী দেয়া হয়েছে তাকে। এমন অবস্থায় পিতার রক্তে স্বাধীন এই দেশে পালিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে এই নাছিমাকে।
গাজীপুরের শ্রীপুরের দক্ষিণ ধনুয়া গ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিনের একমাত্র কন্যার আকুতি- ফিরে কি পাবো না পৈত্রিক জমির এই অধিকার?
নাছিমা আক্তারের ভাষ্য, দাদা মারা যাওয়ার পর থেকেই তার চাচারা তার সম্পত্তি হরণের চেষ্টা চালায়। সম্প্রতি স্থানীয় প্রভাবশালী এক নেতার যোগসাজসে তার চাচা বাদশা মিয়া এই জমি অন্যত্র বিক্রি করার প্রস্ততি নেয়। তার জমি মাপঝোক করে খুঁটিও পোতা হয়। এ খবর পেয়ে তিনি গত রোববার (০৫ জুন) জমিতে গেলে তাকে মারধর করেন তার চাচাতো ভাইয়েরা। এ সময় তার পরিধেয় স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়া হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় আহত হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে এসে থানায় অভিযোগ করেন।
তিনি আরও জানান, তাকে মারধর করেই ক্ষান্ত হননি চাচাতো ভাইয়েরা। ফের জমিতে গেলে মেরে ফেলারও হুমকী দেয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় নিরাপত্তাহীনতায় এক স্বজনের বাড়িতে আছেন তিনি।
অভিযুক্ত বাদশা মিয়ার ভাষ্য, তার ভাতিজি কোন ধরনের জমি পাননা। আমাদের জমি আমরা বিক্রি করছি।