নিজস্ব প্রতিবেদন।
ময়মনসিংহ ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের কাচিনা, বাটাজোর বাজার, মল্লিকবাড়ী, আঙ্গারগাড়া ও ডাকাতিয়া চৌরাস্তা এলাকায় প্রায় ৩০/৪০ টি লাইসেন্স বিহীন করাত কল ছড়াছড়িতে দিনরাত শাল-গজারী ও বাগান কাঠ চিড়াই চলতে থাকায় কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের শাল-গজারী বন প্রায় বিলুপ্তির পথে। জানাযায়, ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের পালগাঁও এলাকায় কাদিগড় বন বিটের অর্ন্তগত শাল-গজারী বনাবৃত বিশাল এলাকা জুড়ে সরকারী ভাবে কাজ চলছে কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের। বন্য প্রাণীর জীববৈচিত্রে ভরপুর আর অতি পুরোনো শাল-গজারী গাছের অপরুপ নয়নাভিরাম সবুজ বনের সমারোহ সেখানে আর আগেরমতন দৃশ্যমান নেই। জাতীয় উদ্যান হিসেবে ওই এলাকাটি চিহ্নিত হওয়ার কাজ শুরুর পর হতে একটি মহল উঠে পরে লেগেছে জাতীয় উদ্যানের ক্ষতি সাধনে। একটি সংগবদ্ধ দল রাতের বেলায় উদ্যান এলাকার বন হতে গজারী গাছ কেটে ঘোড়ার গাড়ী ও বিভিন্ন যান বাহনে নিয়ে বিক্রি করছে পার্শ্ববর্তী বাটাজোর বাজার ও আশপাশের বিভিন্ন করাত কল মালিকদের কাছে। বন আইনে বন এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোন করাত কল স্থাপন সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ হলেও কাদিগড় বনাঞ্চল হতে মাত্র দুই কিলোমিটার দুরে কাচিনা বাজার, আড়াই কিলোমিটার দুরে বাটাজোর বাজারে ৭/৮ টি লাইসেন্স বিহীন করাত কলে দিনরাত চলছে শাল-গজারী ও বাগান কাঠ চিড়াইয়ের ধুম। কাদিগড় বন বিট অফিস হতে মাত্র দুই কিলোমিটার দুরে বাটাজোর বাজারে আতিক মন্ডল, ইমরুল তালুকদার, পলাশ তালুকদার, জাহাঙ্গীর মেম্বার, সেলিম তালুকদার, নয়ন মিয়া, পাপন মিয়াসহ ৭/৮ টি করাত কলে বনের গাছ চেড়াই করছে প্রতিনিয়ত। গেলো রাতে সেলিম তালুকদারের মিলের পিছনে বন বিভাগের লোকজন বিপুল পরিমাণে সেগুন কাঠ জব্দ করলেও রাতে কাঠ নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে বন বিভাগের এক কর্মকর্তা কে মোবাইল ফোনে জব্দ করা কাঠের পরিমাণ জানতে চাইলে সে বলে সকালে তথ্য দিবে এবং সকালে ফোন দিলে বলে বিকেলে তথ্য দিবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাক্তি জানান, রাতে সেগুন কাঠ ছিলো প্রায় একশ সিপটি কিন্তু রাতে বন বিভাগের লোকজন কাঠ নেয় নি। সকালে সেখান থেকে মাত্র তেরো টুকরো কাঠ নিয়েছে বন বিভাগের লোকজন। বাকি কাঠ কে বা কারা কোথায় সরানো হয়েছে কেউ জানে না। তিনি আরো বলেন, বন বিভাগের কর্মকর্তা ও মিল মালিকদের এমন লুকোচুরি খেলা নাকি প্রায়ই ঘটে যার কারণেই বন উজাড় হচ্ছে। এছাড়া জাতীয় উদ্যানের মাত্র দুই কিলোমিটার দুরে তামাট বাজারে শাহীন মেম্বার ও অন্যরা ২/৩ তিনটি করাতকলে রাত দিন বনের কাঠ চেড়াই করে নষ্ট করছে জাতীয় উদ্যানের সৌন্দর্য্য। ফলে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে ওই এলাকার বন্য প্রাণীকুল। বন বিভাগের উর্ধতন কতৃপক্ষ ওই উদ্যান এলাকায় মেছুবাঘ, লজ্জাবতী বানর সহ কয়েক প্রজাতির প্রণী উন্মুক্ত করেছে। অথচ বন বিভাগের লোকজনের উদাসীনতার সুযোগ নিচ্ছে অবৈধ কড়াতকল মলিক ও কাঠ পাচারকারী সংঘবদ্ধ একটি চক্র। নাম প্রকাশে অনিচ্চুক একজন করাতকল মালিক জানান, তারা বছরের পর বছর বন এলাকায় বিনা লাইসেন্সে বনের লোকজনদের ম্যানেজ করেই কল চালাচ্ছেন। বাটাজোর বাজারে এসব করাতকল মালিকদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব ফার্নিচারের দোকানও রয়েছে। জানাযায় (২৯ আগস্ট) শনিবার সকালে ভালুকা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে কাশর এলাকার আতিক মাষ্টার (৪৫), ওয়াহাব বেপারী (৫০), তোতা মিয়া (৪০), আলাল মিয়া (৪০), সাইদুর রহমান (৪৫) এদের করাতকলে অভিযান চালিয়ে ৫ টি করাতকল উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং করাত কল চালানোর বেল্ট,চে-করাত সহ বেশ কিছু মালামাল জব্দ করা হয়েছে। তাই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট সচেতন মহলের দাবী কাচিনা, বাটাজোর বাজার, মল্লিকবাড়ী, আঙ্গারগাড়া ও ডাকাতিয়া চৌরাস্তা এলাকাসহ ভালুকার বিভিন্ন যায়গায় অবৈধ করাত কল উচ্ছেদ করে এবং এ অসাধু কাজে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে বন বিলুপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করা হোক।