নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাজীপুরের শ্রীপুরে দরজা খুলতে দেরি করায় চকপাড়া বাইতুল নূর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিবকে জুতা দিয়ে পেটালেন বেলাল উদ্দিন (বেল্টুর) ছেলে মাওনা ২নংওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক (৩৫)।
শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) দিবাগত রাত আনুমানিক ১১ টায় উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের স্বপন মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুর ১২ টায় চকপাড়া বায়তুন নূর জামে মসজিদের মুসুল্লীরা ইমামকে জুতাপেটা করা প্রতিবাদে নারায়ে তাকবির ধ্বনি দিয়ে সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিক্ষোভ মিছিল শেষে রফিকের বিচার দাবী করে বক্তব্য রাখেন শত শত মুসুল্লিরা।
পরে এবিষয়ে বাদী হয়ে চকপাড়া বাইতুল নূর জামে মসজিদের সভাপতি আবু সায়েম (বি.এ) শ্রীপুর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১১ টার সময় মাওলানা মুফতি আঃ মজিদ,৪ বছর যাবৎ এই বাড়িতেই ভাড়া বাসায় থাকেন। রফিকুল ইসলাম রফিক চলতি মাসের ১৩ তারিখে পাশের রুম ভাড়া নিয়ে রুমে উঠেন। রুমেই ঘুমিয়ে ছিলেন। পাশের বাড়িতে গরু জবাইকরার জন্য ইমাম সাহেবকে ডাকছিলেন এক যুবক, হুজুর উঠছিলেন না। কোনো সাড়া শব্দও করছিলেন না। এমন সময় পাশের রুমেই শুয়ে থাকা ২নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম হুজুরকে চিল্লাইয়া খারাপ গালি-গালাজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে হুজুরের ঘুম ভাঙলে তিনি বলেন দেখুন সারাদিন অনেক পরিশ্রম করেছি তাছাড়া গতরাতেও অনুষ্ঠানের কারণে ঘুমাতে পারিনি। কেনো ডাকছেন বলুন। রফিক বকছে আর বলছে আপনাকে কি টাকা দিয়ে রাখেনি, ডাকলে উঠেন না কেনো? হুজুর বললেন, আমি শুনিনি, কিভাবে উঠবো? আর আপনি এভাবে বকছেন কেনো? আমি আপনার কাছে জবাব দিতে রাজি নই, দয়া করে এভাবে বকবেন না। এটুকু বলতেই রফিক পায়ের জুতা খুলে ইমাম সাহেবকে বেদারক পিটাতে শুরু করেন। পরে হুজুর দৌড়িয়ে নিরাপদ স্থানে যান।
এবিষয়ে মসজিদের সভাপতি আবু সায়েম (বি.এ) জানান, এই ঘটনা এলাকার আরো কয়েকজন দেখেছে এবং রাতেই আমাকে ফোনে জানিয়েছে। ফজরের নামাজ পরে আমি মুসুল্লিদের সাথে বসি এবং এর সত্যতা পাই। কাজেই আমরা এর কঠোর বিচার দাবী করছি। হুজুর অনেকদিন ধরেই আমাদের মসজিদের ইমাম হিসেবে রয়েছেন। তিনি খুব ভালো মানুষ।
মসজিদের ইমাম, মুফতি মাওলানা মোঃ আব্দুল মজিদ জানান, কোন অপরাধ না করে এভাবে কেউ আমাকে জুতা দিয়ে পিটাবে, কিভাবে সহ্য করবো? রফিক আমাকে শুধু জুতা দিয়ে মেরেই শান্ত হয়নি আজকে সকালেও হুমকি দিয়েছে, আমাকে নাকি জুতার মালা গলায় পরিয়ে রাস্তায় ঘুরাবে। মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি স্থানীয় মারকাযু সুন্নাতিন্নাবী (সা:) মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করি। অনেক শিক্ষার্থীদের পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন শিক্ষা দিই। আমি কিভাবে মুখ দেখাবো? প্রথমে ঘটনাটি আমি কাউকে বলিনি, যারা ঘটনাস্থলে ছিলো তারাই সভাপতিকে জানিয়েছেন। আলেম সমাজ ও আমার ছাত্রদের কাছে আমি কিভাবে মুখ দেখাবো? আল্লাহর রাসূলকে ভালোবেসে মুখে দাঁড়ি রেখেছি, ইসলাম প্রচারে নিজেকে উৎসর্গ করেছি। সেই দাঁড়ি রাখা মুখে কিভাবে জুতা মারলো, বলতে পারবেন?
এ ব্যাপারে রফিকুল ইসলাম রফিক এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান আমি রাত্রে হুজুরের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি।
শ্রীপুর মডেল থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন জানান, এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনা স্থল পরিদর্শন করে তদন্ত সাপেক্ষ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।