মোঃ আব্দুল বাতেন বাচ্চু,
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
গাজীপুরের কালিয়াকৈর সিরাজপুর গ্রামে বৃহস্পতিবার সকালে সুদের টাকা না পেয়ে কাঁঠাল গাছের সঙ্গে বেঁধে মা ও মেয়েকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আহতরা হলেন, কালিয়াকৈর উপজেলার সিরাজপুর এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৩৫) ও তার মেয়ে মাহবুবা আক্তার ঝুমা (১৬)। ঝুমা মনিপুর আইডিয়াল পাবলিক স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী।
অভিযুক্তরা হলেন- একই গ্রামের আব্দুল গফুর, কুলসুম বেগম, শিল্পী, মুক্তা আক্তার, মনির হোসনে, রিপন, শহীদ ও নয়ন সিকদার।
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ বছর আগে মমতাজ বেগমের স্বামী আব্দুর রশিদ ফুসফুস জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর মমতাজ বেগম পোশাক কারখানায় কাজ করে মেয়ে ঝুমাকে লেখাপড়া করিয়ে আসছেন। কিন্তু নানা অভাব-অনটনের কারণে কয়েকজনের কাছ থেকে তাকে সুদে টাকা নিতে হয়েছে।
তবে দুই মাস কাটতে না কাটতেই পাওনাদাররা সুদের টাকা আদায় করতে চাপ দিতে থাকেন। পরে চলতি মাসের ১ তারিখ সন্ধ্যায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ইব্রাহীম সিকদারের সমঝোতায় সুদের টাকা পরিশোধের জন্য এক মাসের সময় বেধে দেওয়া হয় ওই নারীকে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় শেষ না হতেই পাওনাদার গফুর ড্রাইভার তার স্ত্রী কুলসুম বেগম ও ছেলে রিপন হোসেন এবং মনির হোসেন ও তার স্ত্রী শিল্পীসহ কয়েকজন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিধবা মমতাজ বেগমের বাড়ি ঘেরাও করেন।
এসময় তারা সুদের টাকা আদায় করতে বিধবা মমতাজ বেগমকে একটি গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করতে থাকেন। মাকে মারধরের হাত থেকে বাঁচাতে মেয়ে ঝুমা এগিয়ে গেলে তাকেও একই গাছে বেঁধে রাখা হয়। মা-মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে প্রায় ঘণ্টাখানেক নির্যাতন চালালেও কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য বিধবা মা ও মেয়েকে উদ্ধার করলে তারা প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এরপর বিকেলে মমতাজ বেগম বাদী হয়ে আট জনের নাম উল্লেখ করে কালিয়াকৈর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ভুক্তভোগী বিধবা মমতাজ বেগম বলেন, একটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা হারিয়েছি। ওই টাকা যোগাড় করতে গফুর ড্রাইভার ও মনির হোসেনের পরিবারসহ কয়েকজনের কাছ থেকে সুদ করতে হয়েছে। টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য ইব্রাহীম আমাকে আগামী এক মাসের সময় দিয়েছেন। আমি ওই টাকা ফেরত দেব। কিন্তু ওই সময় শেষ হওয়ার আগেই তারা বাড়ি ঘেরাও করে আমাকে ও আমার স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেধে নির্যাতন চালিয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত গফুর ড্রাইভার জানান, আমাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি মিথ্যা। তবে আমি মারি নাই, আমি জানিও না। অপর অভিযুক্ত মনির হোসেনের মোবাইলে ফোনে কল দিলে রিসিভ করেনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য ইব্রাহীম সিকদার জানান, ঘটনা শুনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি মা-মেয়েকে গাছের সঙ্গে বেঁধে তাদের মারধর করছে। পরে তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করেছি। তবে ঘটনাটি দুঃখজনক।
ফুলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) জামাল উদ্দিন জানান, মা-মেয়েকে নির্যাতনের বিষয়ে ৯৯৯-এ ফোন আসে। পরে স্থানীয় মেম্বরকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান, এ ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।