মোটরসাইকেল চালানোর স্বপ্ন পূরণ, এবার পাইলট হওয়ার পালা
গোবিন্দ দেব জগন্নাথপুর ( সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
একটা সময় ছিল মেয়েরা ঘর থেকে বের হতে পারত না, বিশেষ করে গ্রামের মেয়েদের জন্য এই বাধানিষেধ ছিল বেশি। পড়ালেখার সুযোগটাও তেমন ছিল না। অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়া হতো।। বিদেশি ছেলে পেলে পরিবারের সবাই বিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে যেতেন।। কিন্তু বর্তমানে সেই দৃশ্যপট পাল্টেছে। এখন মেয়েরা ছেলেদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পড়ালেখা, চাকরিসহ সব কিছু করছে।
সেসব মেয়েদেরই একজন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার মজলিসপুর গ্রামের প্রাপতি দেবনাথ । একে একে পাড়ি দিচ্ছে তার ইচ্ছে পূরণের পথে। সে দিরাই সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবার নাম পাণ্ডব দেবনাথ। তিনি মজলিসপুর গ্রামের একজন মিষ্টি ব্যবসায়ী।
সরজমিনে দিরাই মজলিসপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চোখে কালো চশমা পরে নিজে মোটরসাইকেল চালিয়ে গ্রামে ঘুরছে প্রাপতি দেবনাথ। কথা হয় তার সঙ্গে। সে তার ইচ্ছে পূরণের কথা তুলে ধরে।।
প্রাপতি দেবনাথ বলেন ‘ছোটবেলা থেকে আমার দুটি স্বপ্ন ছিল। প্রথম স্বপ্ন ছিল কালো চশমা পরে মোটরসাইকেল দিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়াব। দ্বিতীয় স্বপ্ন হচ্ছে পড়ালেখা করে পাইলট হব। আমার প্রথম স্বপ্ন সত্যিই পূরণ হয়েছে। আমার বাবা নিজে উনার সব কাজ রেখে আমার পড়ালেখার পাশাপাশি আমাকে মোটরসাইকেল চালানো শিখিয়েছেন। মোটরসাইকেল কিনে দেয়ার পাশাপাশি মোটরসাইকেল চালানোর সব ধরনের পোশাক আমাকে কিনে দিয়েছেন। সেই মোটরসাইকেল দিয়ে আমি এখন আমার পুরো গ্রাম ঘুরে বেড়াই, স্কুলে যাই।। আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যাই। বাজারে গিয়ে নিজে বাসার জন্য বাজার করে নিয়ে আসি।’
একজন মেয়ে হয়ে চশমা লাগিয়ে মোটরসাইকেল চালান। পাড়া-প্রতিবেশী কোনো মন্তব্য করে না? জবাবে প্রাপতি দেবনাথ জানায়, পাড়া-প্রতিবেশী অনেকে অনেক কথা বলে। আমি ওইসব কথায় কান দেই না। গ্রামের অনেকে আমার আড়ালে আমাকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য করে, সেগুলো আমি শুনেও না শোনার ভান করে থাকি। কারণ আমি আদিকালের মেয়ে না, আমি বর্তমান যুগের মেয়ে। তাই কারো কথায় কান না দিয়ে আমি আমার ইচ্ছে পূরণে অটল।
‘বাবা-মা আমার পাশে থাকলে আমি নিশ্চিত আমার স্বপ্নের ইচ্ছে পূরণে কেউ আমাকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। আমার প্রথম স্বপ্ন আমি সত্যি পূরণ করতে পেরেছি। এখন আমার দ্বিতীয় স্বপ্ন পাইলট হওয়া। সেই স্বপ্ন সত্যি করার লক্ষ্যে আমি এগিয়ে যাচ্ছি। একটা যুগ ছিল সমাজে মেয়েদের কোনো দাম ছিল না, তারা মেয়েদেরকে অভিশাপ মনে করত। আমি মেয়েদের উদ্দেশে বলতে চাই, ইচ্ছে পূরণে যত বাধা আসুক লক্ষ্য ঠিক থাকলে বিজয় নিশ্চিত’—যোগ করে প্রাপতি দেবী।
প্রাপতি দেবীর বাবা পান্ডব দেবনাথ বলেন, ‘আমার মেয়ে তার স্বপ্নের ইচ্ছে পূরণ করছে আমি শুধু তাকে উৎসাহ দিচ্ছি। কে কী বলল তাতে কিছু আসে যায় না। আমার মেয়ের মুখের হাসিটাই আমার কাছে সব।’
তিনি আরও বলেন, ‘তার প্রথম ইচ্ছে পূরণ করতে পেরে বাবা হিসেবে সত্যি খুব ভালো লাগছে। এখন আমার মেয়ের দ্বিতীয় ইচ্ছে পূরণের পালা। আমি জানি, আমার মেয়ে পাইলট হতে পারবে।’।