সুনামগঞ্জে কাঠইর গ্রামে ৩টি হিন্দু পরিবার কে গ্রামছাড়ার হুমকি ভূমিখেকোদের
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নের কাঠইর গ্রামে দীর্ঘদিন যাবত ভিপি সম্পত্তিতে লীজমানি পরিশোধকৃত ৩টি হিন্দু পরিবারকে সমাজচ্যূুত করে রেখেছে গ্রামের একশ্রেণীর ভূমিখেকো একটি চক্র। তারা প্রতিনিয়ত এই তিনটি নিরীহ অসহায় পরিবারের লোকজনকে গ্রামছাড়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি দমকী দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে ঐ গ্রামের নিরীহ তিনটি হিন্দু পরিবারের লোকজনের সাথে আলাপকালে তারা জানান,ঐ গ্রামে তারা ৫০ বছর ধরে সরকারী ভিপি-এ জায়গায় বসতবাড়ী নির্মাণ করে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু গ্রামের পঞ্চায়েত নামধারী একটি প্রভাবশালী ভূমি খোঁকো চক্র তাদের উচ্ছেদসহ তাদের গ্রাম ছাড়ার হুমকি ধমকী দিয়ে বসবাসরত ঐ সরকারী জায়গা দখল করে নিতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ঘটনাটি ঘটে চলেছে বহুদিন যাবত ইউনিয়নের কাঠইর গ্রামে। এই ঘটনা নিয়ে বার বার জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে বিচার প্রার্থী হয়ে এবং লিখিত অভিযোগ দিয়েও বিচার পাচ্ছেন না গ্রামের ভূমিহীন তিন হিন্দু পরিবারের লোকজনেরা। লিখিত অভিযোগ ও এবং সরেজমিনে খোজঁনিয়ে যানা যায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ১৫৮নং জে.এল স্থিত নারকিলা মৌজার ৪৪৮নং খতিয়ানের এস.এ-৩০৩১, নং দাগে ০.১৫ + ০.১২ ও ০.২৩সহ মোট ০.৫০ একর ভূমি ’ক’তপশীল ভূক্ত অর্পিত ও অনাগরিক সম্পত্তি। ভি.পি-৭৩/৭২-৭৩ইং নং বন্দোবস্ত মোকদ্দমা মূলে ঐ তিনটি হিন্দু পরিবার প্রতিবছর সরকারের একসনা লীজমানি পরিশোধ পূর্বক বসত বাড়ি ও ঘর নির্মান করে পরিবার পরিজন নিয়ে বসত করে আসছেন প্রায় ৫০ বছর যাবত। কিন্তু ইদানিং বছর খানেক ধরে বিভিন্ন সময় গ্রামের পঞ্চায়েত নামধারী একটি ভূমিখেকোঁ চক্র ঐ তিনটি হিন্দু পরিবারের বসত ঘরে ভাংচুর, হামলাও গ্রাম ছাড়ার জন্য এবং প্রাণে মারার হুমকি প্রদান করে জোর পূর্বক ভাবে সরকারী জায়গা দখল করে নিয়ে যাচ্ছে। নিরুপায় হয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে গত ৪ মে ২০২১ইং তারিখে পঞ্চায়েতের ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অসহায় ভূক্তভোগী পরিবারের বাসিন্দা কলিন্দ্র দাস একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন । কলিন্দ্র দাস কাঠই গ্রামের বাসিন্দা মৃত- জগাই দাসের পুত্র ।
অভিযোগ সূত্রে যানা যায় অভিযুক্ত ভূমিখেকোঁরা হলেন কাঠইর গ্রামের বাসিন্দা মৃত-অমেন্দ্র তালুকদারের ছেলে চিহ্নিত ভূমিখেকোঁ সুরঞ্জিত তালুকদার ও রুপজিত তালুকদার। মৃত-সুকৃতি রঞ্জন তালুকদারের ছেলে সেতু তালুকদার। মৃত সানজব আলীর ছেলে ভূমিখেকোঁ তেরাব আলী এবং চিহ্নিত ভূমিখেকোঁ কালাম মিয়া।
জানা যায় ঐ সমস্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পঞ্চায়েত নামধারী একটি সক্রিয় ভূমিচক্র। গ্রামে প্রভাব কাটিয়ে নিরীহ মানুষজনের উপর বিভিন্ন সময়ে হামলা মারধর করে প্রাণে মারার হুমকি দিয়ে অসহায় মানুষকে গ্রাম ছাড়ার ভয় দেখিয়ে সরকারের অর্পিত সম্পতি জোর পূর্বক দখল করে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এদের বিরুদ্ধে কথা বলায় গ্রামের অসহায় তিনটি পরিবারকে গত কয়েক মাস যাবত একঘরে করে রাখা হয়েছে। ফলে তাদের ছোট ছোট কোমলমতি ছেলেমেয়েরা গ্রামের স্কুলে যেতে না পারায় শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাটবাজারে ও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে এবং গ্রামের কোন মানুষজনের সাথে কথা বলা ও নিষেধ করা হয়েছে। ফলে তারা নিরুপায় অবস্থায় থাকায় তাদের বাড়ীঘর উচ্ছেদসহ গ্রাম ছাড়ার হুমকি দিয়ে তাদের ঘরে বিভিন্ন সময় তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। গ্রামের ভূমিখেকোদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তিনটি পরিবার যখন বিপদগ্রস্থতার খবর শুনে তৎকালীন সুনামগঞ্জ সাবেক সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসমিন নাহার রুমা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অত্যাচারীদের সাবধান করে দিয়ে আসেন। এছাড়াও কয়েক মাস আগে সুনামগঞ্জ সদর থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঐ তিনটি হিন্দু পরিবারের ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় অত্যাচারী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের হাত থেকে রক্ষা করে দিয়ে আসেন এবং তাদের সাবধান করে আসেন যাতে আর কোন দিন ঐ তিনটি পরিবারের লোকজন এবং তাদের বাড়ীঘরে হামলা করা না হয়।
কথায় আছে না চোর না শুনে ধর্মের কাহিনী। কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারো প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এই নিরীহ পরিবারগুলোর উপর ঐ ভূমিখেকো চক্রের শুরু হয়েছে অত্যাচার নির্যাতনের ষ্ট্রীমরোলার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় গত কয়েকদিন ধরে জোর পূর্বকভাবে ঐ ভূমিখেকো চক্রটি সরকারী জায়গায় পাকা দেয়াল নির্মাণ করে দখল করে নিয়ে যাচ্ছে তিনটি হিন্দু পরিবারের ৫০বছরের ভোগ দখলকৃত সরকারী জায়গা । বাধাঁ দিতে গেলে তিনটি হিন্দু পরিবারের লোকজনদের পঞ্চায়েতের নাম দিয়ে একঘরে করে রাখা হয়েছে । এমনকি ছোট ছোট বাচ্চাদেরও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে অভিযুক্ত ভূমিখেকোঁ চক্র। ঐ সমস্ত ভূমিখোঁকাদের হাত থেকে তিনটি পরিবারের লোকজনসহ ৫০ বছরের ভোগদখলকৃত তাদের বসতবাড়ী ও সরকারের জায়গা রক্ষা করে অসহায় তিনটি হিন্দু পরিবারকে বসবাস করার সুযোগ করে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের নিকট দাবী জানান তারা।
এ ব্যাপারে কাঠইর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুফতি শামসুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনাটি শুনেছেন তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রামের পঞ্চায়েতেরে লোকজনের সাথে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করবেন। যদি সমাধান না হয় তাহলে নির্যাতিত পরিবারগুলো আইনের আশ্রয় নিতে পারেন বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা শ্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান,কোন পরিবারকে একঘরে করে রাখা এবং তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে বাধা নিষেধ সম্পূর্ণটাই আইন বিরোধী কাজ। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।