সুনামগঞ্জের ঝরঝরিয়া মাদ্রাসায় হামলা ও ভাংচুর, আহত-৬
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের ঝরঝরিয়া গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মালিকিয়া ফজলিয়া সুন্নিয়া এবতেদায়ী হিফজুল কোরআন মডেল মাদ্রাসায় প্রতিষ্ঠাতার নামে নেমপ্লেট লাগানোর সময় গ্র্রামের প্রতিপক্ষের লোকজনের বাধাঁকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠানের টিনের চালে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল ২৪ মে রাত ৮ টায়।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঝড়ঝরিয়া গ্রামে ইসলামিক শিক্ষার বিস্তার লাভের জন্য ২০১৫ সালের পহেলা জানুয়ারী ঝরঝরিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান এই মাদ্রাসার নামে পেটারগাঁও মৌজার সাবেক ৮১২/৮১৩ ও ৮১৪ নং দাগের ৩৫ শতক ভূমি দান করে মাদ্রাসার বিল্ডিং নির্মাণ করে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে শিক্ষার কার্যক্রম শুরু করেন। এই মাদ্রাসা থেকে গ্রাম ও আশপাশের গরীব মেধাবী শিক্ষ্থর্াী ছেলেরা এই মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে অনেক ইতিমধ্যে কোরআন শিক্ষা নিয়ে বেরিয়েছেন। মাদ্রাসার পাশেই এই দানবীর বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ও তাদের বংশধররা একই দাগের আরো ৮০ শতক ভূমিসহ মোট ১১৫ শত ভূমি মসজিদ ও মাদ্রাসা নামে দান করেন পরবর্তীতে গ্রামবাসাীর সহযোগিতায় মসজিদের বিল্ডিং নির্মাণের মাধ্যমে মুসুল্লীদের নামাজ আদায়ের কার্যক্রম শুরু হয়।
কিন্তু এই মসজিদের ভূমিদাতা ও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুর রহমানের নামে মসজিদে নেমপ্লেট স্থাপনের উদ্যোগ নিলে গ্রামের প্রতিপক্ষ সামছুল হক,মমিন মিয়া,মৃত কালা মিয়ার ছেলে মো. আনোয়ার মিয়া,আলী নেওয়াজ,আবুয সায়েদ,এলফুজ মিয়া,মামুন মিয়া,বাইজিত মিয়া,কাওসার গংদের নেতৃত্বে আরো কিছু লোকজন বাধা নিষেধ করেন। এ নিয়ে ভূমিদাতা পরিবারের লোকজনের সাথে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে গতকাল সোমবার(২৪মে) রাত ৮টায় গ্রামের প্রতিপক্ষ সামছুল হক,মমিন মিয়া,মৃত কালা মিয়ার ছেলে মো. আনোয়ার মিয়া,আলী নেওয়াজ, আবু সায়েদ,এলফুজ মিয়া, মামুন মিয়া, বাইজিত মিয়া, কাওসার গংদের নেতৃত্বে ২০/৩০জন দেশীয় অস্ত্র লাঠিসোটা নিয়ে গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মালিকিয়া ফজলিয়া সুন্নিয়া এবতেদায়ী হিফজুল কোরআন মডেল মাদ্রাসায় এসে জড়ো হয়ে টিনের চালে ভাংচুর করে এবং বিল্ডিংয়ের জানালার দুটি কাচ ভেঙ্গে অফিসকক্ষের কিছু আসবাবপত্র তছনছ করে গাছের চারা ছুড়ে ফেলে চলে যায়। এ সময় হামলাকারীরা পাশের দুটি গরীবের টিনসেটের দোকানের মালামাল তছনছ করে । এসময় মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুর রহমানের পক্ষে তার ৫/৬ জন স্বজন আহত হয়েছেন এবং তারা বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নিস্পত্তির উদ্যোগে নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সুনামগঞ্জ সদর সার্কেল মো. জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে এস আই রুপকসহ পুলিশের একটি দল। বর্তমানে পরিস্থিতি খুবই শান্ত বলে জানা যায়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মকসুদ আলী,মাদ্রাসার ভূমিদাতা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিয্দ্ধোা মো. ফজলুর রহমান,প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান প্রবাসী মো. আনোয়ার হোসেন, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মধু মিয়া,স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
মাদ্রসার প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান প্রবাসী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন,এই গ্রামের গুটি কয়েকজন নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা ভাংচুর করে ধর্মীয় উস্কানী দিচ্ছেন যা কোন ধর্মপ্রাণ মুসলমান এমন ঘৃন্য কাজ করতে পারে না এবং তা মেনে নেওয়া ও যায় না। এই মাদ্রাসার সকল কার্যক্রম তিনি নিজ হাতে পরিচালনা করে আসছিলেন দাবী করে তিনি আরো বলেন যাতে করে এখানকার কোমলমতি ছেলেরা কোরআনের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আলোকিত মানুষ হবে। তিনি হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
এ ব্যাপারে দুটি প্রতিষ্ঠানের ভূমিদাতা প্রতিষ্ঠাতা মো. ফজলুর রহমান তার হাতে গড়া মাদ্রাসায় যে বা যারাই হামলা করেছেন এটা দুঃখজনক উল্লেখ করে বলেন,এই মাদ্রাসাটিতে এই অবহেলিত অঞ্চলের গরীব পরিবারের সন্তানরা ভর্তি হয়ে কোরআনে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে ইসলামের প্রসারে দেশ ও জাতির কল্যানে কাজ করবে। তিনি এমন ঘটনার জন্য প্রশাসনের নিকট বিচার দাবী করেন।
এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মকসুদ আলী এই মাদ্রাসার টিনের চালে ছোটখাটো হামলার ঘটনা শুনে এসেছেন এবং উভয়পক্ষকে নিয়ে বিষয়টি দুয়েকদিনের মধ্যে নিস্পত্তি করার উদ্যোগ নিবেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শহিদুর রহমান বলেন পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।