মোঃ আব্দুল বাতেন বাচ্চু
নিজস্ব প্রতিবেদক:
জোনাকি
শিশু জোনাকির সঙ্গে সাদ্দাম হোসেন অনন্ত
চোখকে বলা হয় দেহের আলো। কিন্তু চোখে যদি আলো না থাকে, তাহলে দেহের কী দাম থাকে!
জম্মের পর থেকে গাজীপুরের শ্রীপুরে উপজেলার জোনাকি মা-বাবার আদর মাখা মুখ, পৃথিবীর আলো দেখতে পায়নি। যে সময় তার নতুন বই নিয়ে স্কুলে সহপাঠীদের সঙ্গে খেলার কথা, নতুন বইয়ের গন্ধে মাতোয়ারা হওয়ার কথা; কিন্তু চোখে আলো না থাকার কারণে কিছুই পারে না সে।
অবশেষে পৃথিবীর আলো না দেখা শিশুটির চোখের আলো ফেরানোর দায়িত্ব নিয়েছেন সাদ্দাম হোসেন অনন্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উজিলাবর এলাকার অন্ধ জাকির হোসেনের মেয়ে জোনাকি। এই পরিবারে আরও ছয়জন জন্মান্ধ ব্যক্তি রয়েছেন। এই সাত অন্ধের দেখভাল করেন জোনাকির বৃদ্ধ দাদি রাশিদা বেগম।
জন্মান্ধ অন্যরা হলেন- জোনাকির চাচা আমির হোসেন (৪০), চাচি শিউলী আক্তার (৩০), দুই ফুফু নাসরিন আক্তার (৩০) ও হাসিনা আক্তার (৩২), বাবা জাকির হোসেন (২৫), ফুফাতো বোন রুপা আক্তার (১২)
জন্মান্ধ এই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন শ্রীপুরের জৈনাবাজার এলাকার প্রয়াত হাজী বেলাল উদ্দিনের ছেলে ‘ফাহিম এবং ফারহানা কম্পিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’ এর প্রতিষ্ঠাতা তরুণ ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন অনন্ত।
জোনাকির বাবা জাকির হোসেন বলেন, সাতজন অন্ধ সদস্যের পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই। কেউ কোনো কাজকর্ম করতে পারে না। অর্থের অভাবে কারো চিকিৎসা হয়নি। অন্ধত্ব আর অভাবের কারণে সংসার ছেড়ে খাদিজা চলে গেছে বহু আগেই। অভাবে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটে তাদের। অন্ধত্বকেই ভাগ্য বলে মেনে নিয়েছেন তারা।
সাতজন অন্ধের মধ্যে পাঁচজন প্রতিবন্ধী ভাতা পান। সংসারের সামান্য আয় আর প্রতিবন্ধী ভাতার টাকায় সংসার চলে না।।
জোনাকির বাবা বলেন, তাদের অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন সাদ্দাম হোসেন অনন্ত। দীর্ঘদিন ধরে তিনি তাদের পরিবারকে সহায়তা দিচ্ছেন। এখন জোনাকির চোখের চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন।
অন্ধ এই বাবা বলেন, আমি চোখে দেখতে পারি না, কিন্তু আমার মেয়ে চোখে দেখতে পাবে। আমি আমার মেয়ের চোখ দিয়ে এই সুন্দর পৃথিবী দেখতে পাব। আমি সাদ্দামের প্রতি কৃতজ্ঞ। মন থেকে দোয়া করি উনি যেন সারাজীবন মানুষের সেবা করতে পারেন।
জোনাকি বলেন, আমি অন্ধ হওয়ার কারণে মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন। আমার অনেক ইচ্ছা করে পৃথিবীর আলো দেখতে। ইচ্ছা হয়, মা-বাবার মুখটি আমি দেখি।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ডাক্তার বলেছেন জোনাকির চোখে লেন্স লাগালে দেখতে পারবে, ইনশাআল্লাহ। আজ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করেছি তার চোখের অপারেশন হয়েছে আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। আপনারা সকলে জোনাকির জন্য দোয়া করবেন। জোনাকি আল্লাহর রহমতে তার চোখের আলো ফিরে পেয়েছে পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারে।