গাজীপুর প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরে এক সৌদী প্রবাসীর পাঠানো বিদেশী স্বর্ণালংকার ও টাকা লুট করতে তার বৃদ্ধ মাকে শ্বাসরোধে খুন করেছে বাড়ির কাজের বুয়ার (গৃহ পরিচারিকা) ছেলে ও তার বন্ধু। ক্লুলেস এ ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন ভোগড়া পশ্চিম পাড়া (মাটির মসজিদ) এলাকার বাচ্চু মিয়ার ছেলে মোঃ আল আমিন (২৬) এবং একই থানার আদেপাশা (উত্তর পাড়া) এলাকার সফিজ উদ্দিনের ছেলে মামুনুর রশীদ (৩৮)।
পিবিআই’র ওই কর্মকর্তা জানান, গাজীপুর সিটি কপোর্রেশনের বাসন থানাধীন আদেপাশা (উত্তর পাড়া) গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের একমাত্র ছেলে বাবুল তার স্ত্রীকে নিয়ে সৌদী আরবে থাকেন। তিন বছরের শিশু নাতি সারা মনিকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করতেন বাবুলের বৃদ্ধ মা ছাহেরা বেগম (৬০)। বাড়িতে কাজের বুয়ার কাজ করতেন ফরিদা বেগম। গত ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট দুপুরে ফোন কল রিসিভ না করায় মায়ের খোঁজ জানার জন্য প্রবাসী বাবুল এক প্রতিবেশীকে অনুরোধ করেন। ওই প্রতিবেশী ও আশেপাশের লোকজন বাবুলের বাড়িতে গিয়ে বাড়ির মেইন গেট তালাবদ্ধ দেখতে পান। তারা দীর্ঘক্ষণ ডাকাডাকি করেও কারো সাড়া পান নি। একপর্যায়ে সৌদী আরব থেকে বাবুলের অনুরোধে তারা তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করেন। তারা বাড়ির একটি কক্ষে গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় ছাহেরা বেগমের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এসময় ওই কক্ষের এক পাশে বসে কান্না করছিল শিশু সারা মনি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে বাসন থানায় মামলা দায়ের করেন নিহতের মেয়ে পারভীন আক্তার।
তিনি জানান, বাসন থানা পুলিশ প্রায় এক বছর সময় মামলাটির তদন্ত করে। কিন্তু কোন রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় মামলাটি তদন্তকালীন সময় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর নির্দেশে পিবিআই গাজীপুর জেলা কতর্ৃক তদন্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে গত ৯জুন হতে পিবিআই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। পিবিআই’র তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক এস এম শাকিল হাসান মামলাটি তদন্ত করেন। পিবিআই’র তদন্ত কর্মকর্তা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ ঘটনায় জড়িত আল আমিন ও মামুনুর রশীদকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে আল আমিন বাড়ির কাজের বুয়া ফরিদা বেগমের ছেলে। তারা এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে আদালতে জবানবন্দি প্রদান করেছে।
গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, মায়ের কাজের সুবাদে ভিক্টিমের বাড়িতে যাতায়ত ছিল বাড়ির কাজের বুয়া ফরিদা বেগমের ছেলে আল আমিনের। গত ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট রাতে আল আমিন ও তার বন্ধু মামুন ওই বাড়ি থেকে বিদেশ হতে বাবুলের পাঠানো টাকা ও স্বর্নালংকারসহ মূল্যবান মালামাল লুট করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রাতে তারা ওই বাড়িতে যায়। আল আমিন ভিকটিমের বাসার সামনে অবস্থান নিয়ে পাহাড়া দিতে থাকে। এসময় মামুন বিদেশ থেকে ছেলে বাবুল ফোন করেছে বলে গেইট খুলতে ভিকটিম ছাহেরাকে বলে। ছেলের ফোনের খবর পেয়ে ছাহেরা গেইট খুলে দেয়। এসময় মামুন ঘরের ভিতরে ঢুকেই ছাহেরা বেগমের গলায় গামছা পেচিঁয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে নীচে ফেলে দেয়। এতে নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ছাহেরা। পরে ঘরের আলমারি হতে বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে মেইন গেট বাহির হতে তালাবদ্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা। এ কাজের জন্য আল আমিনকে ১০ হাজার টাকা দেয় মামুন। এরপ্রেক্ষিতে ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর এ হত্যার রহস্য ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর উন্মোচন হয়েছে।