নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ রবিবার দুপুরে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠে তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজা পড়ান সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের ইমাম আবু সালেহ মো. সলিমউল্লাহ। জানাজার আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষ থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতির কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
জানাজার নামাজে বর্তমান প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরাসহ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন।
এসময় মরহুম শাহাবুদ্দিন আহমেদের ছেলে বাবার আত্মার শান্তি কামনায় সবার কাছে দোয়া চান। জানাজা শেষে শাহাবুদ্দিন আহমেদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বনানী কবরস্থানে। সেখানে স্ত্রীর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।
ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
গতকাল শাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রথম নামাজে জানাজা তার নেত্রকোনোর কেন্দুয়ায় গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন হয়। শনিবার বিকাল ৪টায় কেন্দুয়া উপজেলার পাইকুড়া ইউনিয়নের পেমই গ্রামের বাড়িতে প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
নব্বইয়ের আন্দোলনে স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদ সরকারের পতনের নাটকীয়তার মধ্যে আকস্মিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে আসেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ। এরশাদ পদত্যাগ করার পর রাষ্ট্রপতির পদে কে আসবেন, নির্বাচন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কে থাকবেন- সেই প্রশ্নে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলগুলো (তিন জোট) একমত হতে পারছিল না। পরে প্রধান বিচারপতিকে সেই দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়। আবার সুপ্রিম কোর্টে ফেরার শর্তে শাহাবুদ্দিন আহমেদ তাতে রাজি হন। মওদুদ আহমদ উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলে সে দায়িত্বে আসেন শাহাবুদ্দিন আহমেদ। ৬ ডিসেম্বর এরশাদ ক্ষমতা ছাড়লে তিনি হন রাষ্ট্রপতি। পরে তার নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। নির্বাচনের পর আবার প্রধান বিচারপতির পদে ফেরেন তিনি। তার সেই ফেরার জন্য দেশের সংবিধানেও পরিবর্তন আনতে হয়েছিল। চাকরির মেয়াদ শেষে ওই পদ থেকেই অবসরে যান তিনি।
বাংলাদেশের ষষ্ঠ প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের জন্ম ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার পেমই গ্রামে। তার বাবার নাম তালুকদার রিসাত আহমদ। শাহাবুদ্দিন আহমেদ ১৯৪৫ সালে নান্দাইলের চণ্ডীপাশা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪৮ সালে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ থেকে আইএ পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫১ সালে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) ও ’৫২ সালে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি। ’৫৪ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কর্মজীবন শুরু হয় শাহাবুদ্দিন আহমেদের। ’৬০ সালে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগে বদলি হন তিনি। ’৬৭ সালে ঢাকা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার হিসেবে নিয়োগ পান শাহাবুদ্দিন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ’৭২ সালে হাই কোর্টের বিচারক নিযুক্ত হন। ’৮০ সালে তিনি আপিল বিভাগে বিচারকের দায়িত্ব পান। এর এক দশক পর ’৯০ সালের জানুয়ারিতে প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি।