নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ মার্চ, ২০২২: জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস। সংগঠনটি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, সরকার এবং বিনিয়োগকারীদের প্রকৃতি ও পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম, বিশেষ করে ক্ষতিকর জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের জন্য দায়বদ্ধতা থেকে সরে এসে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার করতে হবে।
জলবায়ূ ও পরিবেশ রক্ষায় বিএমএসএফের সদস্যরা ইয়ুথনেটের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ আবু জাফর। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশকালে এ ঘোষণা দেন।
শুক্রবার (২৫ মার্চ) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বৈশ্বিক পর্যায়ে স্কুল শিক্ষার্থীদের পরিচালিত আন্দোলন ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশ এবং ইয়ুথনেট ফর ফ্লাইমেট জাস্টিস আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়। সমাবেশে শতাধিক তরণ-তরুণী অংশ নেন।
ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিসের ঢাকা জেলার সমন্বয়কারী মিরাজ হোসেনের সভাপতিত্বে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর, ইয়ুথনেটের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান, প্রতীকি যুব সংসদের চেয়ারপারসন আমিনুল ইসলাম, প্রোগ্রাম ম্যানেজার ময়ূরী আক্তার টুম্পা, এসজেড অপু, নাজমুন নাহিদ, আরিফুর রহমান শুভ, আল শাহরিয়ার ফাহিম, ফাহাদ বিন হুসনে আলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা ফ্রাইডেস ফর ফিউচারের বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটের ডাকে একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং বিশ্বের এক হাজারেরও বেশি জায়গায় তরুণরা রাজপথে ও অনলাইনে যে ধর্মঘট পালন করছেন এর সঙ্গে সংহতি জানান।
বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ধনী দেশগুলো দায়ী। অথচ বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত ও গভীর সংকটে পড়েছে। তাদেরকেই নিতে হবে বাড়তি দায়িত্ব, দ্রুততম সময়ে প্রতিশ্রুত অর্থ দিতে হবে। জলবায়ু সুবিচারের দাবিতে উন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য একটি দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য পথনকশা প্রণয়ন, দ্রুত বাস্তবায়ন ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অভিযোজন তহবিল সরবরাহ করতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, কার্বন নিঃস্বরণ কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুতে বিশ্বের উন্নত দেশ ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এসব দেশ ও প্রতিষ্ঠান বহুদিন ধরেই কার্বন নিঃসরণ কমানোর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, জেনারেল ইলেকট্রনিক্স, সুমিটোমো করপোরেশন, জাইকা, এইচএসবিসি ব্যাংক- এর মধ্যে অন্যতম বিনিয়োগকারী।
ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এদের জলবায়ু দূষণে একটি বৈশ্বিক সংঘ বলে উল্লেখ করছে। ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানির প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে তরুণ জলবায়ুকর্মীরা একে বাংলাদেশের জন্য একটি অধিক আর্থিক বোঝা হিসেবে চিহ্নিত করেন। নতুন বিদ্যুৎখাতের মাস্টারপ্ল্যানে নবায়নযোগ্য শক্তির অংশ বৃদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরে কক্সবাজারের মাতারবাড়ী কয়লা পাওয়ার প্ল্যান্ট ফেজ-২ বন্ধের আহ্বান জানান তারা।
বৈশ্বিক পর্যায়ে কার্বন নির্গমন হ্রাস ও দায়ী রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবিতে এ বছর দেশের যেসব জেলায় একযোগে বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘট পালিত হয়েছে, সেগুলো হলো ঢাকা, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, নোয়াখালী, বান্দরবান, বরিশাল, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর, বাগেরহাট, নড়াইল, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও গাইবান্ধা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণেরা কালো পোশাক পরে ব্যানার-ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে মানববন্ধন, পদযাত্রা ও নাটকের মধ্য দিয়ে জলবায়ু সংকট তুলে ধরেন। তরুণদের এ কাজে সহযোগিতা করেন তাঁদের অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
এদিকে কক্সবাজারে ২৪ মার্চ (বৃহস্পতিবার) বৈশ্বিক ক্লাইমেট স্ট্রাইক পালনের অংশ হিসেবে কক্সবাজারের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক জলবায়ু ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়েছে। শতাধিত তরুণ সহ সহ কক্সবাজারের সামাজিক সংগঠনগুলো এবং পরিবেশবাদী সংগঠনসমূহ ইয়াসিড, প্রত্যাশা, ভিবিডি, সহ আরো বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটের ডাকে একাত্মতা প্রকাশ করে। ইয়ুথনেটের জেলা সমন্বয়কারী জিমরান মো: সায়েকের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন ইয়াসিডের ফাউন্ডার কাইসার হামিদ, ভিবিডি কক্সবাজার জেলার সভাপতি শারমিন আক্তার প্রত্যাশার ফাউন্ডার মিজানুর রহমান , ইউএনডিপির কমিউনিকেশন অফিসার আব্দুল্লাহ সেরু প্রমুখ।