মাদারীপুর প্রতিনিধি:
মাদারীপুরে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে গিয়ে সেবা পাচ্ছেন না সেবাপ্রত্যাশীরা। সরকার নির্ধারিত সময়ে অফিস না
করে ফেসবুকে প্রচারনা করে ব্যক্তিগত চেম্বারে অর্থের বিনিময়ে রোগী দেখার অভিযোগ উঠেছে কনসালট্যান্ট-এর বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে সংবাদ প্রচার না করতে অনুরোধ করেন অভিযুক্ত ডা. নাসিরউদ্দিন। যদিও বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার
কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার ঘটকচর এলাকার
আব্দুল গফুর মাতুব্বরের ছেলে আশরাফ মাতুব্বর। মানুষের বাড়ি থেকে কাগজ ফেরির পর বিক্রি করে চলে তার সংসার। দিন শেষে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা আয় তার। সম্প্রতি মাটিতে পড়ে গিয়ে বামহাতে প্রচন্ড ব্যাথা পান। চিকিৎসক দেখানোর পরে তাকে
ফিজিওথেরাপী দিতে বলেন। অসহায় এই মানুষটি ফিজিওথেরাপী নিতে আসেন মাদারীপুর প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে।
দুদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে থেকে পাননি চিকিৎসকের দেখা। পরে বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে চিকিৎসা নেন তিনি।
একই অবস্থা সদর উপজেলার পাঁচখোলা আব্দুল লতিফ ফকিরের ছেলে
এলেম ফকিরের। সরকারি সেবা নিতে যান প্রতিষ্ঠানটিতে। কিন্তু সেখানকার কনসালট্যান্ট ডা. নাসির উদ্দিন পরামর্শ দেন তার ব্যক্তিগত চেম্বার ব্যথা নিরাময় ফিজিওথেরাপী সেন্টারে যেতে। পরে
কনসালট্যান্ট ডা. নাসির উদ্দিন-এর ব্যক্তিগত চেম্বার ব্যথা নিরাময় ফিজিওথেরাপী সেন্টারে ২৬দিন থেরাপি দিয়ে/চিকিৎসা নিয়ে
বৃদ্ধ এই কৃষককে গুনতে হয়েছে সাড়ে ১৭ হাজার টাকা।শুধু আশরাফ মাতুব্বর আর এলেন ফকির’ই নন। প্রতিবন্ধী সেবা ও
সাহায্য কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা অধিকাংশদেরই কৌশলে
পাঠানো হয় ব্যথা নিরাময় ফিজিওথেরাপী সেন্টারে। ফেসবুকে চটকদার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অর্থের বিনিময়ে রোগী দেখার অভিযোগ
উঠেছে এই কনসালট্যান্ট-এর বিরুদ্ধে। আরো অভিযোগ রয়েছে, সরকার নির্ধারিত সময়ে অফিস না করে অর্থের বিনিময়ে
ব্যক্তিগত চেম্বারে বসেন তিনি। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের জাতীয়প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন থেকে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটিতে
২০১৮ সাল থেকে জেলা অফিসে কর্মরত রয়েছেন কনসালট্যান্ট ডা. নাসির উদ্দিন। দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকায় একক আধিপত্যের কারনেই এসব করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানে সেবা না পাওয়া আশরাফ মাতুব্বর বলেন, আমি আমার ছেলেকে সাথে নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুইদিন
গিয়েছি। আমাকে সকাল ৯টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বসিয়ে রেখেছে। কনসালট্যান্ট কখন আসবে জানতে চাইলে, অফিসের
কেউই সঠিক কিছুই বলতে পারেনি। পরে টাকা দিয়ে চিকিৎসা
নিয়েছি।এলেম ফকির বলেন, আমি সরকারি দপ্তরের সেবা জন্য গেলে আমাকে
প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের কনসালট্যান্ট ডা. নাসির উদ্দিন-এর ব্যক্তিগত চেম্বার ব্যথা নিরাময় ফিজিওথেরাপী সেন্টারে
পাঠানো হয়। পরে ২৬দিন চিকিৎসা নিয়ে সাড়ে ১৭ হাজার টাকা দিয়েছি। সরকারে দপ্তরে সেবা না পাওয়া দুঃখজনক।
সুশাসনের জন্য নাগরিক কমিটির মাদারীপুরের সভাপতি রাজন
মাহমুদ বলেন, সরকারি কর্মকর্তা হয়ে ব্যক্তিগত চেম্বারের প্রচারণা করা গুরুতর অপরাধ। সরকারি দপ্তরে সাধারণ মানুষ সেবা
পাবে না, এটা খুবই দুঃখজনক। অভিযুক্ত কনসালট্যান্ট ডা. নাসির উদ্দিন-এর বিষয়ে শিগগিরই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদারীপুরে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের কনসালট্যান্ট ডা. নাসির উদ্দিন বলেন,
নেগেটিভ নিউজ করার কি দরকার। পজিটিভ সংবাদ মানুষের মাঝে তুলে ধরবেন। প্লিজ ভাই নেগেটিভ নিউজ কইরেন না। এই নিউজ
হলে আমাকে বদলি করে অন্য জায়গায় দিয়ে দিবে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া, তিনি ব্যক্তিগত চেম্বারে বসতে পারবেন না। আর
কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে সেটা সরকারি অফিস শেষে চেম্বার করতে পারবেন। সবকিছু তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।