শ্রীপুর ( গাজীপুর)প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম – বাংলার ঐতিহ্যবাহী পলো বাইচ প্রতিযোগিতা মধ্য দিয়ে মৎস শিকার।আগে বছরে একবার এই উৎসবটি পালন করতেন হাওর এলাকার লোকজন।
সোমবার (২৮ মার্চ) শ্রীপুর উপজেলা বরমী ইউনিয়েনের গাড়ারণ গ্রামের মোড়ল বাড়ি পুকুরে এই পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। পলো বাওয়া উৎসবের খবর পেয়ে ভোর বেলা থেকেই গাজীপুর জেলার পাশ্ববর্তী উপজেলা থেকে পলো নিয়ে মোড়ল বাড়ি পুকুরের আসতে শুরু করে মৎস্য শিকারীরা।
গাজীপুরের কাপাসিয়া, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ,পাকুন্দিয়া, নরসিংদী, মনোহরদী, শিবপুর, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, পাগলা, ভালুকা টাঙ্গাইলের সখিপুর থেকে প্রায় দেড়শত মৎস্য শিকারী অংশ গ্রহন করেন এই উৎসবে।
সকাল ১১ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত একটানা চলে মৎস্য শিকার। কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ গ্রামের ফুরকান উদ্দিন বলেন, আমি সৌদিআরব প্রবাসী ত্রিশ বছর পর এমন একটি উৎসবে মাছ ধরতে এসেছি। আমি নিজে মাছ ধরতে পারিনা তাই একজন মৎস্য শিকারী চুক্তি করে নিয়ে এসেছি। দুটি পলো সাথে এনেছি। আমরা অনেক মাছ পেয়েছি এতে আমি অনেক আনন্দিত। আমার কাছে এটা একটা চমৎকার গ্রামীণ উৎসব মনে হয়েছে।
ভালুকা থেকে মৎস্য শিকারী আফাজ উদ্দিন বলেন, গত রাতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খবর পেয়েছি এই পুকুরে নাকি পলো বাওয়া হবে। তাই ভোরে পলো নিয়ে দুই সিএনজিতে করে ৮ জন চলে এসেছি। আজ অনেক মাছ পেয়েছি।
কিশোরগঞ্জে পাকুন্দিয়ার মৎস্য শিকারী আলতাফ হোসেন বলেন, বর্তমান যুগে কালের গর্ভে এই উৎসবটি বিলিন হতে চলেছে। নতুন প্রজন্মের অনেক ছেলেরা পলো বাওয়া উৎসব কি সেটা বুঝে না জানেওনা। কিন্তু এই উৎসবটি ধরে রাখতে হবে। আমরা প্রতি বছর এই মৌসুমে বিলে, পুকুর ও জলাশয়ে পৌষ মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত কোথাও পলো বাওয়া উৎসব হলে অংশ নিয়ে থাকি।
শিবপুর থেকে আসা কামরুল হাসান বলেন, আমরা বিভিন্ন বিলে পলো বাওয়াতে অংশ নেই তবে আজ এখানে পুকুরে পলো বাওয়াতে এসেছি আশা করছি ভালো মাছ পাওয়া যাবে। দীর্ঘদিন থেকে বিপুল উৎসাহ – উদ্দীপনায় আমরা গ্রামবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে ওই সব উৎসবে অংশ নিয়ে থাকি।
পলো বাওয়া দেখতে আসা রিফাত আহমেদ বলেন, আমাদের শ্রীপুরে এখন আর খাল বিলে মাছ নেই। কারখানার বর্জে নদীতে মাছ মরে ভেসে উঠে। হারিয়ে যাওয়া বাঙালি ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে নদীমাতৃক প্রতিটি এলাকাতে নদীর দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
প্রতি বছর খাল, বিলে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসবের আয়োজন করা উচিত।
পুকুর কর্তৃপক্ষ জানায়, পুকুরে দেশীয় প্রজাতির রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কাপ, তেলাপিয়া, শৈল, মাগুর সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে। আমরা সম্মিলিত ভাবে এই পুকুরে মাছ চাষ করে থাকি। পুকুরের আয়তন ১ একর ৪৮ শতাংস। আমরা পুকুরের মাছ গুলো একজন মৎস্য শিকারীর কাছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বিক্রি করে দিয়েছি। তারা জাল ছাড়া শুধু পলো দিয়ে মাছ গুলো ধরে নিবে। পরে তার ফোনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন শিকারীদের মেসেজ পাঠিয়ে পলো বাওয়া আয়োজন করেন।
মৎস্য শিকারী গ্রুপের নেতা ফারুক বলেন, আমারা পুকুরের মাছ গুলো কিনে নিয়েছি। এখন শিকারী অনুয়ায়ী পলো প্রতি ১ হাজার ২ শত টাকা করে নিয়ে পুকুরে মাছ ধরার জন্য নামতে দিব। আর আমাদের লোকজন থাকবে পাহারা দিতে যাতে কেউ বাহিরের লোক না নামতে পারেন। আশা করছি সকল শিকারী ভালো মাছ ধরতে পারবেন।