নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীতে হঠাৎ করে বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। বর্তমানে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। গত এক সপ্তাহ আগেও যা বিক্রি হয়েছে ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকায়। এখন ক্রেতাদের মনে প্রশ্ন হঠাৎ করে গরুর মাংসের দাম বাড়ার কারণ কী?
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ। খামারিরা এখন গরু বিক্রি করতে চায় না। কারণ, তিন মাস পরেই কোরবানি। তারা খামারে লালনপালন করা গরু বিক্রির জন্য কোরবানির বাজার ধরতে চায়। এ কারণে বাজারে গরুর সরবরাহ কমেছে। অপরদিকে দেশের অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে গো-খাদ্যের দামও বেড়েছে। শুষ্ক ঋতু বলে এখন লতাপাতা ঘাস বা খড় নেই। খামারে লালন করা গরুর জন্য দোকান থেকে কেনা খাদ্যই ভরসা। ফলে গরুর দাম বেড়েছে। আর গরুর দাম বাড়লে মাংসের দাম বাড়বেই যা খুবই স্বাভাবিক।
চড়া দামের কারণে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো গরুর মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য হারিয়েছেন। ফলে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তরাই এখন গরুর মাংসের মূল ক্রেতা। এক কেজি মাংস ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা দিয়ে কেনার সামর্থ্য রাখে এমন মানুষ এখন হাতে গোনা। কারণ, চার থেকে পাঁচ সদস্যের পরিবারের জন্য এক কেজি মাংস কেনা অসম্ভব। বিক্রেতারাও এখন আর এক কেজি মাংস বিক্রি করতে চায় না। এ ক্ষেত্রে কম পক্ষে দুই কেজি মাংস কিনতে ১৩ থেকে ১৪শ’ টাকার প্রয়োজন হয়। এমন সামর্থ্যবান মানুষের সংখ্যা কমেছে। মাঝারি আয়ের চাকরিজীবীদের রান্নাঘরে গরুর মাংসের প্রবেশও মাঝে মধ্যে ঘটে। দরিদ্র পরিবারে পবিত্র ঈদুল আজহা ছাড়া গরুর মাংস পাতে ওঠে না বলেই জানিয়েছেন তারা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাবে, ঢাকায় ২০১৪ সালে এক কেজি গরুর মাংসের গড় দাম ছিল ৩০০ টাকা। ওই সময় মাঝারি আকারের দেশি মুরগির প্রতি কেজি দাম ছিল ৩১৭ টাকা। ২০১৮ সালের সর্বশেষ হিসাবে, দেশি মুরগির গড় দাম ৩৫২ টাকায় ওঠে, আর গরুর মাংসের গড় দাম ৫২৭ টাকায় ঠেকে। ক্যাবের হিসাবে, গত অক্টোবরে গরুর মাংসের গড় দাম ছিল প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা।
ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়ার পর গত চার বছরে বাংলাদেশে অনেক গরুর খামার হয়েছে। তরুণদের অনেকে বড় খামার করে উদ্যোক্তা হয়েছেন। সরকার দাবি করছে, নিজেদের গরুতেই ঈদুল আজহার বিপুল চাহিদা মিটছে। তবে তা দিয়ে বছরের অন্য সময়ের চাহিদার কতটুকু মিটছে তা স্পষ্ট নয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে এখন গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৮৫ লাখের মতো। ২০১৮ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর হিসাব দিয়েছিল, তখন গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৩৯ লাখ ছিল।