গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ফরিদপুর গ্রাম পুলিশের আটক আতঙ্কে এখন পুরুষ শূন্য এমনকি গ্রামের শিশু ও নারীরাও রীতিমত পুলিশের ভয়ে দিন পার করছে!
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামে গত ২২ এপ্রিল শুক্রবার সন্ধ্যায় জমি বিরোধের জেরে গ্রাম্য সালিশ বসে। আর এই সালিশে শ্রীপুর থানার এ এস আই শাহিনুর রহমানের ঘুঁষিতে নাক ফেটে যায় রইস উদ্দিন নামের এক যুবকের। তখন স্থানীয় জনতা ওই পুলিশকে মারধর করে ২ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। এঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আট ব্যক্তিকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
গতকাল (২৩ এপ্রিল) শনিবার দিবাগত রাতে এ মামলার আসামী ধরতে গিয়ে পুলিশ বেশ কয়েকটি বাড়িতে প্রবেশ করে নারী ও শিশুদেরকে মারধরসহ বাসার গেইট, দরজা জানালা ভাংচুর করে। এমনকি রান্না করার মাটির চুলা ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চালায়। এঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে গ্রামের পুরুষরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। ভাড়াটিয়া ছাড়া কোন পুরুষকেই গ্রামে দেখা যায়নি। তবে এঘটনায় পুলিশ ওই রাতে তিন ব্যক্তিকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
আটককৃত ব্যক্তিদের স্বজনদের দাবি, যাদের আটক করা হয়েছে তারা নির্দোষ পুলিশ সদস্যকে আটকিয়ে রাখার সময় ঘটনাস্থলে তারা কেউ ছিলো না। পুলিশের দায়ের করা মামলার অভিযুক্তদের নামের তালিকায়ও তাদের নাম নেই।
আটককৃতরা হলো, ফরিদপুর গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে ইসাহাক (২০), বাকের মুন্সির ছেলে মোঃ সিরাজুল ( ৪৫ ), পিয়ার আহমেদের ছেলে মোঃ আলম মিয়া ( ৫০ )।
ভুক্তভোগী হালিমা খাতুন বলেন, রাত ১২ টার দিকে পুলিশ সদস্যরা এসে ঘরের সব কিছু ভেঙে তছনছ করে ফেলে। বিদ্যুৎ সংযোগ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়। দেখেন সকল হাঁড়ি পাতিল কেমনে পড়ে আছে।
আপনারা ছবি তুলে নিয়ে যান। বাড়িতে পানি ও বিদ্যুৎ কিছুই নেই। আমার রান্না করার সকল মাটির চুলা ভেঙে দিযেছে়, ঘরের ফ্রিজও ভেঙেছে।
তিনি আরও জানান, আমার অসুস্থ ছেলেকে ঘুম থেকে ধমক দিয়ে তুলে কয়েকটি থাপ্পড় মারে পুলিশ সদস্যরা। তারা এই বলে হুমকি দিয়ে যায় যে, নায়েব আলীর বংশধর রাখবো না। আব্দুল খালেকের ছেলে জোবায়ের মামুন রাতে বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গে ধাওয়া দেয় সে দৌড়ে পালিয়ে নিজে কে রক্ষা করে।
তিনি আরো জানান, পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা আমিনের ছেলে মামুন আর মাসুদ আমাদের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। এসময় পুলিশ আমার মা হালিমাকে হাতকড়া পড়িয়ে পাকা রাস্তা পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে পরে ছেড়ে দেয়।
স্বপ্না নামের একজন বলেন, আমার ভাই পুলিশের হাতে মারখেয়ে গুরুতর আহত হয়েছে এখন উল্টো স-ই মামলা খেয়েছে। রাতে পুলিশ এসে বাড়িতে ঢুকার প্রধান দরজা ভাঙচুর করে বাড়িতে ঢুকে ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।
অপর ভুক্তভোগী হালিমা আক্তার বলেন, আমার বাড়িতে পুলিশ প্রবেশ করে টিনের বেড়া ভাঙে এরপর আমার স্বামীকে আটক করে নেয়ার সময় আমি বাধা দিলে পুলিশ আমাকে আঘাত করে আঙুল ফাটিয়ে দেয়। অথচ ওই ঘটনার সময় আমার স্বামী বাড়িতে ছিলো না।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার ঘটনার মামলার তিনজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃত আসামীদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাসাবাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, এবিষয়ে থানা পুলিশকে কোন ভুক্তভোগী জানায়নি। তবে মারধর আর ভাঙচুরের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।