মিঠাপুকুরে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দে অনিয়ম-দূর্নিতি; ঘর পেলেন সরকারি কর্মচারী
স্টাফ রিপোর্টার
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের খোর্দ্দ-মুরাদপুর গ্রামে মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ন-২, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেলেন পায়রাবন্দ ডাক বাংলায় কর্মরত সিকিউরিটি গার্ড রমজান আলী। শুধু ঘর নয়, প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অন্যসব ঘরের চাইতে এটার নকশা এবং আয়তন প্রায় দ্বিগুন। অনেকের ধারনা এ ঘরটি নির্মাণে প্রায় দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের সম-পরিমান অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এ ঘর পেয়েও খুশি হতে পারেননি রমজান আলী, তাই তার আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরটির কিছু অংশ ভেঙ্গে তার পাশেই ছাঁদ পিঠানো একটি ঘরের কাজ শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে উক্ত ছাঁদ পিঠানো ঘরের কলামে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মরত শ্রমিকরা। নির্মাণ সামগ্রী কিনে রেখেছেন কয়েক লক্ষ টাকার।
শনিবার(২১মে) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পায়রাবন্দ বেগম রোকেয়ার স্মৃতি বিজড়িত প্রবেশদ্বারের প্রায় দুই শত গজ পশ্চিমে খোর্দ্দ মুরাদপুর মৌজাস্হ রাস্তার উত্তর পাশেই রমজান আলীর আশ্রয়নের ঘরটি। তার পাশেই চলছে আরেকটি নতুন বিল্ডিং নির্মানের কাজ। আশ্রয়নের যে ঘরটি আছে তার কয়েকটি পিলার এবং পিছনের কিছু অংশ ভেঙ্গে নতুন বিল্ডিংয়ের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। আশ্রয়নের ঘরটির উপরের ৪৬ মিলি রঙ্গিন টিন থাকার কথা থাকলেও রয়েছে সাধারণ টিন। অন্যসব ঘর ৪০০ বর্গফুট আয়তনের হলেও রমজান আলীর ঘরটি আয়তনে ভিন্ন। নিজেকে ভূমিহীন দাবি করা রমজান আলীর বাড়িভিটে মোটামুটি ১২ শতাংশের বেশী হবে। পাশ্ববর্তী রেজাউল(৩৫) নামে এক ব্যক্তি জানায়, রমজানের জমিটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার অধিক হবে। তবু এমন জমি পায়রাবন্দের আশেপাশে পাওয়া দুষ্কর।
স্থানিয় ও আশেপাশের বিভিন্ন লোকজন জানান, রমজান আলী পায়রাবন্দ ডাক বাংলাতে সিকিউরিটি গার্ডের সরকারি চাকরি করেন। বেতনভাতা পান মোটামুটি। ডাকবাংলো থেকে একটি সরকারি কোয়ার্টার বরাদ্দ পেয়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে সেখানেই থাকেন। পায়রাবন্দ বাজারে সুরুজ সু-ষ্টোর নামে তার দুটি জুতার দোকান আছে। সহিদুল ইসলাম(৩৮) নামে এক ব্যক্তি জানান,রমজানের নিজের দু-বিঘার মতো চাষবাদ করার মতো জমি রয়েছে। তার নিজের জন্মস্থান নিলফামারী জেলার ডিমলায় পৈত্রিক পাকাবাড়ি এবং কয়েক একর জমি রয়েছে। কিভাবে তিনি ভূমিহীনদের জন্য বরাদ্দের দ্বিগুণ বড় ঘর পেলেন তাই নিয়ে তারা বিস্ময় প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে রমজান আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি পায়রাবন্দ ডাক বাংলোয় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরিতে কর্মরত থাকায় নীলফামারী থেকে পায়রাবন্দে স্হায়ী হয়েছেন। তিনি পায়রাবন্দ ডাক বাংলোর কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। এখানে তার তেমন কিছু নাই। বড় কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে একটি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন। ঘরটি বড় এবং বসবাসের উপযোগী করতে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এক স্যার তার পকেটের সাতাশ হাজার টাকা এবং আমার প্রায় লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে আশ্রয়নের ঘরটি বড় করে নির্মাণ করে দিয়েছেন । রমজান আলী জানান, উক্ত আশ্রয়নের ঘরটি আমার নিজের নামে নয়। আমার স্ত্রী রনজিনার নামে বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। আমাদের উভয়ের নামে উক্ত আশ্রয়নের ঘর নির্মানের জায়গাটিতে ৯ শতাংশ জমির মধ্যে আমার স্ত্রী রনজিনার ৫ শতাংশ এবং আমার নামে ৪ শতাংশ ভিটেমাটি আছে। তার মধ্যে আমার স্ত্রী রনজিনার পাঁচ শতাংশ জায়গার মধ্যে আশ্রয়নের ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। এখন ছেলের টাকা পয়সা হয়েছে, তার শ্বশুরের বিশাল অবস্থা। জায়গা সংকট হওয়ায় সে নতুন পাকাবাড়ি নির্মান করতেছে। আমার বাবার জমি নিলফামারিতে আছে,তবে সে- সব নদীর চরে। এখানে যেসব চাষবাদ করি,তা আমার বন্ধক এবং বর্গা নেওয়া। গৃহ-হীনদের দেওয়া ঘর ভাঙ্গার বিষয়ে জানতে চাইলে, রমজান জানান, নতুন বাড়ির নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় গাড়ি লেগে ভেঙ্গে গিয়েছে। মেরামত করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়ে লাভ নেই। কেউ আমার কিছু করতে পারবেনা। আমার উপরে লোক আছে।
এ বিষয় মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন , গৃহহীনদের জন্য দেয়া এসব ঘরের নকশা পরিবর্তন কিংবা বৃত্তশালীদের পাওয়ার কোন সূযোগ নেই। এ পর্যন্ত আমাকে কেউ অভিযোগ দেয়নি। এখন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।