ট্রেনে কাটার নাটক সাজায় ঘাতকরা! হাত কেটে পিটিয়ে শরীর থেঁতলে হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা
শ্রীপুর(গাজীপুর)প্রতিনিধি.
ডান হাত কুনুই থেকে কাটা। বাম পা,শরীর পিটিয়ে থেঁতলানো। রেল সড়কের পাশে অচেতন পরেছিলো তোফাজ্জল। দেলোয়ারা ফোন করে খবর দেয় তোফাজ্জল ট্রেনে কাটা পড়েছে। স্বজনরা গিয়ে মৃতবদ তোফাজ্জলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। দু’দিন পর জ্ঞান ফিরলে ভাইদের কাছে বলেন হামলা কারীদের নাম পরিচয়। ১৪ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জালড়ে মারা যান তিনি। এমন নৃসংশ হত্যা কান্ডের ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের কাওরাই পল্লিবিদ্যুত সাবস্টেশনের পাশে ।
নিহত তোফাজ্জল ওই গ্রামের মো.আবদুর রহিমের ছেলে। তোফাজ্জলের মৃত্যুর ২৫দিন পার হলেও কান্না থামেনি স্বজনদের। পরিবারের অভিযোগ ঘাতকরা তাকে কোপিয়ে পিটিয়ে রেলসড়কের পাশে ফেলে ট্রেনে কাটার নাটক সাজিয়েছে।
এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই মোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে আদালতে ৭জন সহ অজ্ঞাত ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নং ৮৩২/২২ দায়ের করেছেন। মামলায় অভিযুক্তর হলো মো. রাকিব মিয়া (৩২),মো. মোখলেছ মিয়া (৩০),মো. হারুন(৩০),মোছা.দেলোয়ারা (৪০),মো. রুবেল মিয়া(২৮),মো. রাছেল(২৫),মো. কা,রুল আহসান গোলাপ(৫০)।
নিহতের পরিবার জানায়, প্রতিবেশী বুলবুলের স্ত্রী দেলোয়ারার সাথে জমিনিয়ে বিরোধ আছে তোফাজ্জলের পরিবারের । মামলাও রয়েছে। গত ৩ জুন সকালে দেলোয়ারার সাথে কাঁঠাল নিয়ে ঝগড়া হয়। এসময় দেলোয়ারা ৭দিনের মধ্যে দেখে নেয়ার হুমকী দেয়ন। ৮জুন রাত সাড়ে আটটারদিকে ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার নিগুয়ারী গ্রামের আনোয়ারের ছেলে রাকিব ফোন করে তোফাজ্জরকে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। তোফাজ্জলের ফিরতে দেরী হলে রাত ১টারদিকে স্ত্রী রিতা আক্তার ফোন করে। তোফাজ্জল স্ত্রীকে জানিয়েছিলো রাকিব,মোখলেছের সাথে কথা বলছে, ‘এখুনি বাড়ি অসবে।’ রাতে তোফাজ্জল আর বাড়িতে আসেনি। ৯জুন ভোর সাড়ে পাঁচটারদিকে দেলোয়ারা ফোন করে জানায় তোফাজ্জল ট্রেনে কাটা পড়েছে।
পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায় তোফাজ্জলের ডান হাত কাটা। বাম পা,শরীর থেতলানো। অচেন রেলসড়কের পাশে পড়ে আছে। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শ্রীপুর পরে ময়মনসিংহ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। দু’দিন পর জ্ঞান ফিরলে তোফাজ্জল ভাইদের কাছে কারা তার হাতকেটে পিটিয়েছে তাদের নাম বলেছে। অবস্থা আশংকা জনক হলে তাকে ডা. হাবিবা ইষ্টার্ণকেয়ার হসপিটালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ১৪দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে তোফাজ্জল ২২জুন মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন।
তোফাজ্জলের বাড়িতে গিয়ে দেখাযায় শোকস্তব্ধ পুরো পরিবার। মৃত্যুর ২৫দিন পরও থামেনি স্বজন দের আহাজারী। ফেলফেল করে তাকিয়ে থাকে দু’সন্তানের জননী স্ত্রী রিতা আক্তার । ৬বছরের তামিমা খোঁজে ফিরে বাবাকে। ছেলের কথামনে করে হাও মাও করে কাঁদেন বৃদ্ধ বাবা-মা। ছোট ভাইকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মেঝু ভাই মোফাজ্জল।
মোফাজ্জল জানান, অভিযুক্ত দেলোয়ারা পরিকল্পিত ভাবে তোফাজ্জলকে অন্যদের নিয়ে হত্যা করেছে। ঘাতকরা তার হাত কেটে শরীর থেঁতলে মৃত ভেবে রেলসড়কের পাশে ফেলে রাখে । পরে ঘটনা ধামা চাপা দিতে ট্রেনে কাটার নাটক সাজায়। ঘটনার দু’দিন পর তোফাজ্জল জ্ঞান ফিরলে বের হয়ে আসে আসল রহস্য। দু’ভাইকে তোফাজ্জল বলেগেছে ঘাতকদের পরিচয়। ঘাতকরা তাকে কোপিয়ে হাত কেটে পিটিয়ে শরীর খেঁতলে রেলসড়কের পাশে ফেলে রাখে। আদালতে মামলা করলেও অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মামলা করায় হত্যার হুমকি দিচ্ছে। পরিবার নিয়ে আতঙ্কে আছে তোফাজ্জলের পরিবার। হুমকীর ঘটনায় মোফাজ্জল ২৮জুলাই তারিখে শ্রীপুর থানায় সাধারণ ডায়রী নং ৯০৫ করেছেন। বৃদ্ধ বাবা আ.রহিম ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করেন।
গাজীপুরের পিবিআই’র পুলিশ সুপার মো. মাকসুদুর রহমান জানান, মামলাটি তদন্তাধীন আছে। তদন্ত শেষে পরবর্তি আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।