মোঃ আব্দুল বাতেন বাচ্চু,
নিজস্ব প্রতিবেদক :
মারধরের সময় ভিডিও করার জন্য আরেক কিশোরকে পেটলেন ইউপি সদস্য
মারধরের সময় ভিডিও করার জন্য আরেক কিশোরকে পেটান ইউপি সদস্য।
গাজীপুরে চুরির অভিযোগে জনসম্মুখে এক কিশোরকে পেটাচ্ছিলেন সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রাশেদুল হক। এ সময় সেই মারধরের ভিডিও করায় আরেক কিশোরকে বেধড়ক পিটিয়েছেন তিনি।
গতকাল সোমবার থেকে মারধরে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে গত ২৭ জুলাই (বুধবার) বিকেলে গাজীপুর সদর উপজেলার ভাওয়াল মির্জাপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিকেবাড়ি এলাকায় একটি মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি খোলা মাঠে চেয়ারে বসে আছেন ইউপি সদস্য রাশেদুল হক। তাঁর চারপাশে শতাধিক মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছেন। আর তাঁর সামনে মাটিতে বসা দুই কিশোর। তাঁদের মধ্যে একজন পিটুনি খেয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। তারপরেও পেটানো হচ্ছে। সে হাত তুলে মাফ চেয়ে পিটুনি থেকে বাঁচা চেষ্টা করছে। এমন অবস্থাতেও ইউপি সদস্য রাশেদুল হক লাঠি দিয়ে কিশোরকে পেটাচ্ছেন আর গালিগালাজ করছেন। এ সময় ইউপি সদস্যকে বলতে শোনা যায় ‘ভিডিও করলি কেন?’
এ নিয়ে বিকেবাড়ি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, ইউপি সদস্য রাশেদুল হক এলাকায় তাঁর খেয়াল খুশি মতো বিচারের নামে লোকজনকে মারধর করেন। গত ২৭ জুলাই বিকেলে চুরির অভিযোগে এক কিশোর ধরে আনা হলে তিনি তাকে মারধর করেন। ওই কিশোরকে মারধর করার সময় সেখানে উপস্থিত অপর এক কিশোর সেটি ভিডিও ধারণ করছিল। এ সময় মেম্বার তাঁকেও ধরে এনে মারধর করা কিশোরের পাশেই পেটান। কিন্তু তাদের বাড়ি ওই এলাকার না হওয়ায় কিশোরদের পরিচয় জানা যায়নি।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য রাশেদুল হক বলেন, এক কিশোর এলাকায় আগেও বিভিন্ন জনের মোবাইল, ঘরের দরকারি জিনিসপত্র চুরি করে আগেও ধরা পড়েছে। বিভিন্ন সময়ে তাকে শাসন করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। একবার পুলিশে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে ভালো হয়নি।
ভাওয়াল মির্জাপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিকেবাড়ি এলাকায় এক কিশোরকে পেটাচ্ছেন ইউপি সদস্য রাশেদুল হক
ভাওয়াল মির্জাপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিকেবাড়ি এলাকায় এক কিশোরকে পেটালো
ইউপি সদস্য আরও বলেন, ‘ওই কিশোর স্থানীয় জসিম পোলট্রি থেকে মুরগি চুরি করেছে। পোলট্রির ম্যানেজার বাচ্চুসহ অন্যরা কিশোরকে তিনটি মুরগিসহ হাতেনাতে ধরে আমার কাছে নিয়ে আসে। চুরি করার অভিযোগে তাকে আমি ‘শাসন’ করেছি। ‘শাসন’ করার সময় এখানে উপস্থিত আরেক যুবক ভিডিও করছিল। এ জন্য তাকেও ‘শাসন’ করেছি। আমি কাউকে মারধর করিনি।’
ইউপি সদস্যের দাবি করেন, ‘‘শাসন’ করার সময় কয়েকশত মানুষ উপস্থিত ছিল। সকলেই আমাকে সমর্থন দিয়েছে। কেউ কোনো প্রতিবাদ করেনি। ওই দুজনের কেউই স্থানীয় নয়।’
এ বিষয়ে ভাওয়াল মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুল হক মুসল্লী বলেন, ‘আমি লোকমুখে ঘটনা শুনে ওই মেম্বারকে বিষয়টি জানতে চেয়েছি। তিনি আমাকে ঘটনা জানিয়েছেন। পরে আমি মেম্বার সাহেবকে বলেছি, কাজটা তিনি ঠিক করেননি।’
এ বিষয়ে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ঘটনার শোনার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। ভুক্তভোগী কাউকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।