নিজস্ব প্রতিবেদক:
জ্বালানি তেলের নতুন দাম কার্যকর হয়েছে গতকাল মধ্যরাতে। পুরোনো দামে তেল কিনতে রাত ১২টার আগেই রাজধানীর পাম্পগুলোতে ভিড় লেগে যায়। মতিঝিলের করিম ফিলিং স্টেশনে
জ্বালানি তেলের নতুন দাম কার্যকর হয়েছে গতকাল মধ্যরাতে। পুরোনো দামে তেল কিনতে রাত ১২টার আগেই রাজধানীর পাম্পগুলোতে ভিড়
ডলার-সংকট ও বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে দেশে জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ৩৪ থেকে ৪৬ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। গতকাল শুক্রবার রাত ১২টা থেকে নতুন এই দাম কার্যকর হয়েছে। এখন ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের খুচরা মূল্য হবে প্রতি লিটার ১১৪ টাকা, পেট্রল ১৩০ ও অকটেন ১৩৫ টাকা।
নতুন দামে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৮০ টাকা থেকে ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। একইভাবে পেট্রলের দাম ৮৬ টাকা থেকে ৫১ দশমিক ১৬ এবং অকটেনের দাম ৮৯ টাকা থেকে ৫১ দশমিক ৬৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। গতকাল রাতে বিদ্যুৎ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
এদিকে গতকাল রাতে আরেকটি সরকারি সূত্র আভাস দিয়েছে, জ্বালানি তেলের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। যদিও সরকার এই মূল্যবৃদ্ধিকে সমন্বয় হিসেবে দেখাতে চাইছে।
তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে পেট্রল পাম্পে যানবাহনের ভিড়তেলের দাম বৃদ্ধির খবরে পেট্রল পাম্পে যানবাহনের ভিড়
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কথা প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গতকাল রাত ১২টার আগেই রাজধানীর বিভিন্ন পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে তেল কিনতে আসা যানবাহন-চালকেরা বিপাকে পড়েন। তেল না পেয়ে তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। কয়েকটি পাম্পে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহন-চালকদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।
যা বললেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, যত দিন সম্ভব ছিল, তত দিন সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর চিন্তা করেনি। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা নিরুপায় হয়েই কিছুটা সমন্বয় করতে হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জ্বালানি তেলের মূল্য পুনর্বিবেচনা করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী গতকাল দাম বাড়ার আগে রাজধানীর বারিধারায় নিজ বাসভবনে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার কারণে বিপিসির (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) ইতিমধ্যে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়েছে। এর পরিমাণটা বেশ বড়, তাই বিশ্ববাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের একটা সমন্বয় থাকা উচিত।’ তেলের দাম বাড়ালে যে নেতিবাচক প্রভাব জনগণের ওপর পড়ে, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটার সরাসরি প্রভাব পড়ে জনগণের ওপর। ডিজেল, পেট্রল, অকটেন—এগুলো যেন একটা সহনীয় পর্যায়ে থাকে, সেই চিন্তা করে আমরা একটা সমন্বয়ে যাব।’
দাম বৃদ্ধির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ পাম্প, বিক্ষোভদাম বৃদ্ধির ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ পাম্প, বিক্ষোভ
জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে কৃষি উৎপাদন ও যাতায়াত ভাড়ায় কী প্রভাব পড়বে, জানতে চাওয়া হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়লেও কৃষি খাতে দাম অপরিবর্তিত রাখার চিন্তা করছে সরকার। কৃষিতে ব্যবহৃত ডিজেলে সরকার ভর্তুকি দিয়ে যাবে। সবচেয়ে বেশি তেল ব্যবহৃত হয় পরিবহন খাতে। আমরা হিসাব করে দেখতে পাচ্ছি, ডিজেলের দাম বাড়লে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়ে ১ থেকে ২ টাকা। এ জন্য আমরা বিআরটিএ, বিআইডব্লিউটিএ, পরিবহন মালিক সমিতি, ট্রাক মালিক সমিতি—সবার সঙ্গে বসে আলোচনা করে ঠিক করার চিন্তা করছি।’
বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, জ্বালানি তেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ডিজেল, যা মোট জ্বালানির ৭৩ শতাংশ। গত বছরের নভেম্বরে ডিজেলের দাম ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়। বিপিসি বলছে, প্রতি ব্যারেল ডিজেল গত বছরের ডিসেম্বর মাসে কেনা হয়েছে ৮৩-৮৬ মার্কিন ডলারে, এখন কিনতে হচ্ছে ১৭৩-১৭৫ মার্কিন ডলারে। প্রতি লিটারে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে গড়ে ৫৫ টাকা। প্রতি লিটার অকটেনে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে প্রায় ৩৫ টাকা। সম্প্রতি বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ দেশ টিভি বাংলা কে বলেন, বিপিসি যেভাবে ভর্তুকি দিচ্ছে, তাতে প্রতিষ্ঠানটির দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দাম বাড়ার খবরে তেল বিক্রি বন্ধ: এদিকে গতকাল মধ্যরাত থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার খবর পেয়ে আগেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পাম্পগুলো তেল বিক্রি বন্ধ করে দেয়। মতিঝিলের করিম ফিলিং স্টেশন অন্য দিন সব সময় খোলা থাকলেও শুক্রবার রাতে হঠাৎ সেখানকার সব আলো নিভিয়ে তেল বিক্রি বন্ধ রাখা হয়। তেল না পেয়ে যানবাহনচালকেরা সেখানে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পরে বন্ধ পাম্প, বাইকারদের রাস্তা অবরোধ দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পরে বন্ধ পাম্প, বাইকারদের রাস্তা অবরোধ
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর উত্তরা এলাকার প্রায় সব পাম্প বন্ধ করে রাখেন মালিকেরা। উত্তরার আজমপুরের কসমো ফিলিং স্টেশন, আবদুল্লাহপুরের তাসিন সিএনজি ফিলিং স্টেশন, খন্দকার সিএনজি পাম্প, উত্তরা ফিলিং স্টেশন এবং বিমানবন্দরের পাশের একটি পাম্প বন্ধ দেখা যায়। এর প্রতিবাদে রাত সোয়া ১১টার দিকে উত্তরার আজমপুরে যানবাহনচালকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে আবদুল্লাহপুরেও মহাসড়ক অবরোধ করে অনেককে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
আবদুল্লাহপুরে কর্তব্যরত উত্তরা পশ্চিম থানার এএসআই সালাম দেশ টিভির প্রতিনিধি কে বলেন, সরকার তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যে কারণে পাম্প থেকে তেল দেওয়া হচ্ছে না। এতে ক্ষুব্ধ মোটরসাইকেলচালকেরা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন।
জানতে চাইলে উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ আলম বলেন, ‘আমি পুলিশ পাঠাচ্ছি। পুলিশ পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।