নিজস্ব প্রতিবেদক :
ময়মনসিংহের ভালুকা রেঞ্জ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এবং মল্লিকবাড়ি বিট কর্মকর্তা রইচ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও তিনি বহাল তবিয়তেই আছেন। একজন রেঞ্জ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এত এত অভিযোগ থাকার পরেও কি করে তিনি বহাল তবিয়তে থাকেন তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জানা গেছে বেশ কিছু দূর্নীতির অভিযোগে ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ কে এম রুহুল আমিন একাধিকবার রেঞ্জ কর্মকর্তা রইচ উদ্দিনকে কৈফিয়ত তলব করলেও বার বার অদৃশ্য শক্তির জোরে বেঁচে যাচ্ছেন এই অসাধু রেঞ্জ কর্মকর্তা। আংগারগাড়া বিট অফিসার থেকে সদ্য (৫ মাস পূর্বে) ভালুকা রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েই তিনি ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেন, তিনি ভালুকা রেঞ্জের দায়িত্ব পাবার পর থেকেই বিভিন্ন ফ্যাক্টরিকে বনভুমি জবরদখলের সুযোগ করে দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। লোক মুখে কথিত যে তিনি মাত্র পাঁচ মাসেই অবৈধ উপায়ে দেড় কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় তিনি মল্লিকবাড়ি মৌজার ৩৬৮ ও ৩১০ নং দাগে বিশাল একটি প্রস্তাবিত ফ্যাক্টরির সিমানা প্রাচির নির্মান করার সুযোগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা ও মল্লিকবাড়ি মৌজার ২০৫ নং দাগে আরেকটি সিমানা প্রাচির নির্মান করার সুযোগ দিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অপরদিকে হবিরবাড়ি মৌজার ৮২৯ নং দাগে ন্যাশনাল পলিমার নামক একটি নির্মানাধিন ফ্যাক্টরি কাজ করার অনুমতি দিয়ে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। টাকার নেশায় বিভোর রইচ উদ্দিনের বিরুদ্ধে সাধারন মানুষের নির্মানাধিন বাড়ি ঘর থেকেও উৎকোচ গ্রহনের অভিযোগ রয়েছে অসংখ্য। এছাড়াও কাদিগড় বিট, হবিরবাড়ি বিট ও মল্লিকবাড়ি বিটে কেও একটা টিনের ঘর করলেও রইস উদ্দিনকে টাকা দিয়ে তার পর ঘর করতে হয় বলে জানিয়েছেন অনেক ভুক্তভোগী। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আংগারগাড়া বিটে থাকাকালিন সময়েও অনেক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিলো। ভুক্তভোগীরা বলেন একটা ইটের ঘর করতে গেলেই রইচ উদ্দিনকে ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে ঘর করতে হয়েছে। এমন ঘরের সংখ্যা ওই এলাকায় ৩ শতাধিক। জানা গেছে ভালুকা রেঞ্জ অফিসের সামনে ৮৭ নং দাগে একটি প্রস্তাবিত কোম্পানি কয়েক কোটি টাকার জমি দখলে নিয়ে সিমানা প্রাচীর নির্মান করে বেশ কিছু স্থাপনা করেছে। তাছাড়া ৭২২ নং দাগে বাগান কেটে জনৈক আবুল হাসেম বাড়ি নির্মান করছেন। ১৮৫ নং দাগে ঝালপাজা সড়কে আঃ গফুর নামে এক ব্যাক্তি বহুতল ভবন নির্মান করছেন। মেহেরাবাড়ি মৌজার ৭৪ নং দাগে আড়াই একর জমি দখলে নিয়ে সিমানা প্রাচীর নির্মান করছেন প্রভাবশালী এক ব্যাক্তি। পাড়াগাঁও মৌজার গৌরিপুর এলাকায় ৯৫৭ নং দাগে ফিনিক্স গ্রুপ নামে এক কোম্পানি প্রায় ১০ একর জমি দখলে নিয়ে বেশ কয়েকটি বিশাল আকারের পুকুর নির্মান করছেন। একই মৌজার ৪৮৩ নং দাগে ডিবিএল নামে এক প্রস্তাবিত কোম্পানি সিমানা প্রাচীরের কাজ করছে। এদিকে মনোহরপুর মৌজার ৩৭২ নং দাগে বনবিজ্ঞপ্তিত রামচরনের উচু টিলাটি জনৈক মনির হোসেন তার ভ্যাকু দিয়ে পর্যায়ক্রমে কেটে নিয়ে ভুমির শ্রেণী পরিবর্তন করে বিশাল জলাশয় তৈরি করছেন। এমন অসাধু বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মুখে কেও কিছু বলতে পারেনা মামলার ভয়ে। কেও প্রতিবাদ করলেই তাকে মামলার ভয় দেখান রইচ উদ্দিন। জানা গেছে তিনি যেখানেই চাকরি করেন সেখানেই তিনি রাঘব বোয়ালদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। তারপর তাদের সাথে মিশে বনভুমি ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেন। তাছাড়া ভালুকা বনএলাকা হবার পরও অবাদে গড়ে উঠছে অবৈধ করাতকল মনোহরপুর গভীর শাল গজারী বনের ভিতরে একধীক করাত কল চালাচ্ছে রেঞ্জ অফিসার রইচ উদ্দিনের অনুমতি ক্রমে। কিছুদিন পূর্বে বনমন্ত্রী এসব অবৈধ করাতকল বন্ধের নির্দেশ দিলেও বন্ধ হয়নি একটি করাতকলও। অনেকেই বলেন, রেঞ্জ কর্মকর্তা রইচ উদ্দিনকে মোটা অংকের মাসুহারা দিয়ে চলে এসব অবৈধ করাতকল। অভিযোগ রয়েছে আংগারগাড়া বিট অফিসার থাকা কালিন বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে ভালুকা রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। স্থানীয়দের ধারনা ভালুকায় বনমন্ত্রীর আত্মীয় থাকায় তাদেরকে ব্যবহার করে তিনি কোন অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন কি না? তা না হলে তিনি বার বার বেচে যাচ্ছেন কিভাবে? হবিরবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা প্রতিটি ঘটনার সাথে বনবিভাগের অসাধু ব্যক্তিরা জরিত এবং তারা তা থেকে অনৈতিক সুবিধা নিযে থাকেন। একাধিক অভিযোগ পেলে হয়তো কোন কোন স্থাপনার আংশিক ভেঙ্গেই তাদের দায়িত্ব শেষ করেন।