মোঃ আব্দুল বাতেন বাচ্চু,
প্রতিবেদক:
এক নারীর শরীর স্পর্শ করে তাকওয়া পরিবহনে তোলা হচ্ছে।
গাজীপুরের শ্রীপুরে তাকওয়া পরিবহনে চলাচলকারী নারী যাত্রীরা প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে তাকওয়া পরিবহনের চালকের সহকারীরা বাসে নারী যাত্রীদের তোলার সময়, সিটে বসা নিয়ে প্রতিনিয়ত হেনস্তা করছে।
ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে সরেজমিন ঘুরে এ রকম চিত্র দেখা যায়। গত শুক্রবার বিকেলে দেখা যায় তাকওয়া পরিবহনে সহকারী সুমন মিয়া ডেকে ডেকে যাত্রী ওঠানোর কাজ করছিলেন। এ সময় এক তরুণী আসার সঙ্গে সঙ্গে দৌড় দিয়ে বাসের দরজার সঙ্গে দাঁড়িয়ে তরুণীর শরীর ধরে বাসে ওঠালেন। এর একটু পরেই এক বয়স্ক নারী ব্যাগ হাতে আসলেও তাকে বিন্দুমাত্র সহযোগিতা করে বাসে তোলা হয়নি। একই বাসস্ট্যান্ডে তাকওয়া পরিবহনে আরেকটি বাসের সহকারী মো. হুমায়ুনকে অপর এক নারীর বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। অভিযোগ বাসের সহকারী ওই নারীর শরীর ধরে বাসে তোলার চেষ্টা করেন। পরে অন্য পরিবহনে উঠে চলে যান ওই নারী।
উপজেলার জৈনা বাজার বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় তাকওয়া পরিবহনে সহকারী ইব্রাহিম খলিলের সঙ্গে কথা হয়। কেন তিনি নারীর শরীর ধরে বাসে উঠান? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা তো কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে যাত্রীদের গায়ে হাত দেয় না।’ এদিকে বয়স্ক যাত্রীরা আসলে কেন তাদের সহযোগিতা করে বাসে ওঠানো হয় না? এমন প্রশ্নের উত্তরে জবাবে উত্তর দেননি বাসের এই সহকারী।
এ বিষয়ে কথা হয় মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা তাকওয়া পরিবহনে চালক সুমন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমিও এক সময় শ্যামলী বাংলা পরিবহনের হেলপার ছিলাম। অনেক যাত্রী সঙ্গে করে মালামাল নিয়ে আসলে আমরা সহযোগিতা করে বাসে ওঠাতাম। তবে এটা আমাদের খারাপ উদ্দেশ্য নয়। গায়ে হাত দেওয়া ছাড়া কি যাত্রী ওঠানো যায় না? এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি বলেন, ‘পারে তবুও হেলপার মাঝে মধ্যে গায়ে হাত দিয়ে যাত্রী ওঠায়।’ তিনি আরও বলেন, শুধু তাকওয়া পরিবহনের হেলপার না, অনেক পরিবহনে এ ধরনের কাজ করে থাকে।’
এদিকে তাকওয়া পরিবহনের সামনে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়া যাত্রী সালমা আক্তারের সঙ্গে কথা হয় জৈনা বাজার বাসস্ট্যান্ডে। তিনি বলেন, ‘বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ানো সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন ছেলে এসে টানাহেঁচড়া শুরু করছে। আপা এটার সিট খালি, এটা ভালো গাড়ি। তাদের ধমক দিয়েও সরানো যায় না। কি আশ্চর্য! আমরা নারী বলে ওঁরা আমাদের প্রতিনিয়ত হয়রানি করছে।’
মাওনা টু রাজেন্দ্রপুরের দায়িত্বে থাকা তাকওয়া পরিবহনের স্বপন আহমেদ দেশ টিভি বাংলা র প্রতিবেদক কে বলেন, এ সকল বিষয়ে চালক ও চালকের সহকারীকে প্রতিনিয়ত সাবধান করা হয়। আজকের পর থেকে এ ধরনের চিত্র আর দেখা যাবে না।
গাজীপুর জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও তাকওয়া পরিবহনের দায়িত্বে থাকা মো. সুলতানা সরকার মোবাইলে দেশ টিভি বাংলার প্রতিবেদককে বলেন, গাজীপুর থেকে জৈনা বাজার পর্যন্ত তাকওয়া পরিবহনের প্রায় শতাধিক বাস চলাচল করে থাকে। এতে দু-একজন চালকের সহকারী হয়তো এ ধরনের কাজ করে থাকতে পারে। এ বিষয়ে চালক হেলপারদের বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। আশা করি অচিরেই এটা বন্ধ হবে।
গাজীপুর ভাওয়াল বদলে আলম সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অসীম বিভাকর বলেন, ‘পদে পদে আমার দেশের নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে এটা নতুন নয়। আসলে এদের মধ্যে দায়িত্ব বোধের অভাব রয়েছে, তাঁদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। দায়িত্ববোধ আর প্রশিক্ষণ দুটোই ঠিক থাকলে অনেকাংশে এ ধরনের অপরাধ কম হবে।’
এই শিক্ষক আরও বলেন, সমাজে নৈতিক অবক্ষয় চলেছে এদের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত প্রকাশ। আধিপত্যবাদী মনোভাব, আধিপত্য মনোভাব থাকার কারণে এঁরা কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না। এদের পেছনে এমন একটি শক্তি কাজ করছে, যে শক্তি তাদের এ ধরনের কাজ করতে উৎসাহ দিচ্ছে। যার কারণে দিন দিন বেড়ে চলছে এ ধরনের অপরাধ।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চলতি দায়িত্বে থাকা পরিচালক ডাক্তার তপন কান্তি সরকার দৈনিক ঢাকার ডাক পত্রিকাকে বলেন, একজন নারীকে অনুমতি না নিয়ে ছোট্ট একটি স্পর্শ যৌন হয়রানির মধ্যে পড়ে।
মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করে এ ধরনের অপরাধীর বিচার করা হবে। এ বিষয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে গুরুত্বের সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।