শ্রীপুরে নানা হত্যার দায়ে নাতী আটক
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের শ্রীপুরে নানাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে নাতীকে আটক করেছে পুলিশ। নিহতের স্বজনদের দাবি পাঁচ হাজার টাকার জন্যই নাতি নানাকে হামলা করেছে।
শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলা রাজাবাড়ী ইউনিয়নের বড়চালা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। শনিবার সকালে নিহতের বসত বাড়ির গুদাম ঘর থেকে পুলিশ ওই বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করেছে। নিহত আ: হক মাদবর (৯৫) বড়চালা গ্রামের মৃত দোখাই মাদবরের ছেলে।অভিযুক্ত সালেক নিহতের নাতিন। তিনি ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার (পাগলা) থানার মশাখালী গ্রামের মো. জামালের ছেলে।
স্বজনদের বরাত দিয়ে রাজাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য গিয়াস উদ্দিন জানান, নিহত আ: হক মাদবর ও তার ছেলে হারুন মাদবর পাশাপাশি কক্ষে থাকেন। হারুনের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল বাবার কক্ষেই রাখতেন। হারুন মাদবর রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোটরসাইকেল দিয়ে বাড়িতে প্রবেশকালেই হঠাৎ পেছন থেকে তার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। পেছন ফিরে তার ভাগ্নে আবু সালেককে দেখতে পান, সাথে সাথে লাঠি দিয়ে পুনরায় আরেকটি আঘাত করে সালেক দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে হারুণকে উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে রাত তিনটার দিকে বাড়িতে আনা হয়। পরিবারের লোকজন হারুণের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় রাতে তার বাবার খোঁজ নেয়নি কেউ। সকালে তার বাবাকে ঘরে না পেয়ে খোঁজ করতে থাকেন। খোজাখুজির এক পর্যায়ে পাশের ঘরে মেঝেতে বস্তায় ঢাকা বাবার মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। তারা ধারণা করছে, ভাগ্নে আবু সালেক তার নানাকে হত্যা করে ঘরের মেঝেতে বস্তায় ঢেকে রেখে পালিয়েছে। নিহতের মাথায় আঘাত ও নাকে আঘাতের চিহ্ন আছে, কান দিয়েও রক্ত বের হচ্ছিল।
নিহতের নাতনি হেনা আক্তার ও মাসুদ জানায়, সালেক নেশায় আসক্ত। বিভিন্ন সময় তার মামা হারুনুর রশিদের কাছ থেকে টাকা চাইতো। মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে সালেক তার মামা হারুনের নিকট পাঁচ হাজার টাকা চায়। হারুন টাকা দিতে রাজি হননি। টাকা না পেয়ে সালেক ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এরপর থেকে প্রতিদিনই ওই বাড়িতে গিয়ে টাকা চাইতো সালেক। শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে টাকা চেয়েছিল। রাত ৮টার দিকে পুনরায় ওই বাড়িতে গিয়ে হাঙ্গামা করে, ক্ষিপ্ত হয়ে সালেক চলে যায়। রাত দশটার দিকে হারুন বাড়ি থেকে বাহিরে যায়। রাত এগারোটার দিকে হারুন বাসায় ফিরে মোটরসাইকেল রাখছিল। এসময় পূর্ব থেকে উৎ পেঁতে থাকা সালেক পেছন থেকে শিল পাথর দিয়ে হারুনের মাথায় আঘাত করে পালিয়ে যায়। গুরুত্বর আহত হারুনকে রাতেই শ্রীপুর হাসপাতালে নেয়া হয়। এসময় বৃদ্ধ আ: হককে খোঁজে পাচ্ছিল না স্বজনরা। এরপর থেকে স্বজনেরা রাতভর খোঁজে আ: হকের সন্ধান করতে পারেনি। শনিবার সকালে খোঁজাখোজি করে তারা এক পর্যায়ে বাড়ির গুদাম ঘরে বস্তা, আবর্জনার নিচে হকের মরদেহ দেখতে পায়।
শ্রীপুর থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, সালেক টাকার জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে তার নানা, মামাকে পৃথক সময়ে শিল পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এতে আ.হক মারা যান। অভিযান চালিয়ে ঘাতককে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত শিল পাথরটি। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য গাজীপুরের শহিদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।