লালনের রাজধানী কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় ৩ ব্যাপী লালন স্মরণউৎসব উদ্বোধন করলেনঃ হানিফ।
ইশতিয়াক আহম্মেদ কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধিঃ
বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের গান, বাউল মেলা ও সাধুসংঘের মধ্য দিয়ে শনিবার থেকে কুষ্টিয়া কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণউৎসব।
আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধনী ও আলোচনা সভা শুরু সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা থেকে। ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি। ভক্ত অনুসারীরা আগে থেকেই লালন আখড়ায় জায়গা করে নিয়েছেন। অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আখড়াবাড়ির প্রাঙ্গন ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে এক বর্ণিল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে লালন একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
মরমী এ সঙ্গীত সাধকের স্মরণউৎসব উপলক্ষে তাঁর সাধন-ভজনের তীর্থ স্থান ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গন পরিণত হয়েছে এখন উৎসবের পল্লীতে। দেশ-বিদেশ থেকে এখানে আগমন ঘটেছে লালনভক্ত, বাউল অনুসারী ও সুধীজন’সহ অসংখ্য মানুষের। উৎসব শুরু আজ ৪ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত। স্মরণোৎসবে থাকবে লালনের স্মৃতিচারণ করে আলোচনা সভা , লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান ও লালন গ্রামীণ মেলা।
কুষ্টিয়া শহরের কোল ঘেঁষে কুমারখালী উপজেলার কালীগঙ্গা নদী। এ নদীর তীরেই ছেঁউড়িয়ার লালন সমাধি। বাংলা ১২৯৭’র পহেলা কার্তিক ও ইংরেজী ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ সালে এখানেই মরমী সাধক লালন সাঁইয়ের শেষ শয্যা রচিত হয়। গবেষকদের মতে, বাউল সাধক ফকির লালন শাহ’র জীবদ্দশায় দোল পুর্ণিমা উপলক্ষে পালন করা হতো দোল উৎসব। আর দোল পুর্ণিমাকে ঘিরেই বসতো সাধু সংঘ।
লালনের সেই স্মৃতির ধারাবাহিকতায় লালন একাডেমীও প্রতিবছর এ উৎসবটিকে ‘লালন স্মরণউৎসব’ হিসাবে পালন করে আসছে। তবে লালন অনুসারীরা দিনটিকে ‘দোল পূর্ণিমা’ উৎসব হিসাবেই পালন করে থাকেন।
সাধুদের মতে, সত্যিকার অর্থে লালন অনুসারীরা দোল পূর্ণিমার এ রাতটির জন্য সারা বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। সাঁইজির রীতি অনুসারে দোলপুর্ণিমার রাতের বিকেলে অধিবাসের মধ্য দিয়ে ২৪ ঘণ্টার দোলসঙ্গ শুরু হয়। চৈত্রের পূর্ণিমা রাতে জ্যোৎস্নার ছটায় আর মাতাল হাওয়ায় গানে গানে বাউল সাধকরা হারিয়ে যায় ভিন্ন কোনো জগতে। পরের দিন ৪ টায় ‘পুণ্যসেবা’ দিয়ে সাধুসঙ্গ শেষ করে আখড়াবাড়ি ত্যাগ করেন বেশির ভাগ সাধু। প্রকৃত সাধুসঙ্গের অধিবাস শেষ হলেও লালন একাডেমি আয়োজিত মূল মঞ্চে লালনগীতি ও লালনমেলা চলে আরও দু দিন। তাঁরা মনে করেন, মানবধর্মই বড় ধর্ম। একসাথে এভাবে সাধুসঙ্গ করলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
সাধু-গুরুর কৃপা ছাড়া মানুষ মুক্তি পেতে পারে না। তার কৃপায় মানুষ সঠিক পথ দেখে। লালন স্মরনোৎসব ঘিরে কালীগঙ্গা নদীর ধারে প্রতিবছরই বসে জাঁকজমকপূর্ণ বিশাল গ্রামীণ মেলা।
(৪ মার্চ) শনিবার দোল পুর্ণিমার রাতে শুরু হয়ে তিনদিন ব্যাপি চলবে লালন স্মরণোৎসব-২০২৩। শুরুর দিনই সন্ধ্যায় ৩ দিনব্যাপি এই লালন স্মরণোৎসবের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি । এতে সভাপতিত্ব করবেন লালন একাডেমির সভাপতি ও কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া-৪ কুমারখালী-খোকসা আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, কুষ্টিয়া ১ দৌলতপুর আসনের সংসদ সদস্য আঃকাঃমঃ সরওয়ার জাহান বাদশাহ,জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার খাইরুল আলম,কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আজগর আলী, কুমারখালি উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান খান, কুমারখালি পৌর মেয়র সামছুজ্জামান অরুন, কুষ্টিয়া জজ কোটের বিজ্ঞ পিপি এ্যাডঃবাবু অনুপ কুমার নন্দী, কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির সভাপতি ডাঃ এস এম মুস্তানজিদ, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব (কেপিসি)’র সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব। প্রধান আলোচক উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট গবেষক ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শাহীনুর রহমান। আলোচক ছিলেন লালন মাজারের খাদেম মোহাম্মদ আলী। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখারেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক শারমিন আখতার, কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল। স্বাগত বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পিপি ও লালন একাডেমির অ্যাডোক কমিটির সদস্য এ্যাডঃশহিদুল ইসলাম। আলোচনা সভা শেষে লালন একাডেমীর শিল্পীদের পরিবেশনায় পরিবেশিত হয় রাতভর লালন সংগীত।
কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপার খাইরুল আলম জানান
সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন এবং অন্যান্য বারের তুলনায় এবারে আরও বেশি লোক সমাগম ঘটবে লালন ভক্ত অনুসারীদের। আর এ উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে কয়েক স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।