নিজস্ব প্রতিবেদক :
দুর্ঘটনায় স্কুলছাত্রের মৃত্যুর খবর, পরিবারের দাবি হত্যা
গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুরে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে প্রাইভেটকারের সংঘর্ষে মাহফুজ ফরাজি (১৭) নামের এক স্কুলছাত্র নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে নিহতের পরিবারের অভিযোগ, তার সঙ্গে থাকা বন্ধুরা ওই কিশোরকে হত্যা করেছে।
গত সোমবার (১৫ মে) রাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত মাহফুজ ফরাজি জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিঙ্গারদিঘী গ্রামের ফজলুল হক ফরাজির ছেলে। সে স্থানীয় প্লেজ হার্বার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ‘ও লেভেল’ পর্যন্ত অধ্যয়নরত ছিল। বর্তমানে সে স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
নিহত মাহফুজের বাবা ফজলুল হক ফরাজি বলেন, গতসোমবার রাতের খাবার শেষে মাহফুজ ঘরে বসেছিল। একটি প্রাইভেটকারে তৌফিক, তার চালকসহ আরও দুইজন বাড়ির গেটে এসে গাড়িতে হর্ন দেয়। এরপর আমার গাড়ির চালক তাদের কাছে গিয়ে জানতে চাইলে মাহফুজকে বাড়ির বাইরে আসতে বলে তৌফিক। পরে মাহফুজ বাড়ির বাইরে গিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করে সবার অগোচরে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর ফোন করে অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা মাওনা চৌরাস্তায় আছে বলে জানায়। পরে রাত সাড়ে ১০টায় মাহফুজের মোবাইল থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি দুর্ঘটনা সম্পর্কে তার মাকে জানায়। কিন্তু ঘটনাস্থল রাজেন্দ্রপুরে গিয়ে কাউকে খুঁজে পাইনি। পরে আমরা জানতে পারি মাহফুজকে গুরুতর আহত অবস্থায় মাওনা চৌরাস্তার আল হেরা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এরপর সেখান থেকে মাহফুজকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে ময়মনসিংহ থেকে মাহফুজকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের পরিবার জানিয়েছে, সম্প্রতি অভিযুক্ত তৌফিক তার বাড়িতে বেশি আসত। তাকে নিষেধ করা হলেও সে নিষেধ মানেনি। প্রেমঘটিত বিষয়ে নিহত মাহফুজ ও তৌফিকের মধ্যে বিরোধ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে প্রেমঘটিত বিষয়েই মাহফুজকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়েছে তৌফিক।
ঘটনার বিষয়ে জানতে তৌফিকের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে তাকে না পেয়ে যোগাযোগ করা হয় তার বাবা মোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমার ছেলেও আহত হয়েছে। তাকে ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার বিষয়ে ছেলের সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলতে পারিনি। তবে তৌফিকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা পুরোপুরি মিথ্যা ও সাজানো।
মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন রাজধানীর শাহবাগ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোলাম হোসেন খান। তিনি মুঠোফোনে বলেন, নিহত মাহফুজের কপালের দিকে বড় দুটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া ঠোঁটেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। কপাল এবং ঠোঁটের আঘাত দেখে মনে হয়নি এটা সড়ক দুর্ঘটনায় আঘাতের চিহ্ন। আমরা মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছি। প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি সম্পর্কে জানা যাবে।
নিহতের বাবা জানিয়েছেন ঘটনার বিষয়ে শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও জমা নেয়নি পুলিশ। অভিযোগ জমা না নেওয়ার বিষয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম নাসিম বলেন, ভুক্তভোগীর পরিবার থানায় পরামর্শের জন্য এসেছিলেন। এক বন্ধু তো আরেক বন্ধুকে ডেকে নিতেই পারে। যেহেতু একটি ঘটনা ঘটে গিয়েছে আমরা বলে দিয়েছি আপনারা গিয়ে ঘটনাস্থল নির্ধারণ করে পরে আসুন।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল ইসলাম বলেন, তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে এরকম অভিযোগে কেউ এখনও থানায় যোগাযোগ করেননি। আমরা দুর্ঘটনার খবরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি প্রাইভেটকার উদ্ধার করে হেফাজতে নিয়েছি। এ বিষয়ে কারও কোনো অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।