নিজস্ব প্রতিবেদক :
পারভেজকে পারভীন ভেবে পিত্তথলি কেটে ফেললেন ডাক্তার।
টাঙ্গাইলে ভুল চিকিৎসায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক যুবকের পিত্তথলি কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। একজন নারী রোগীর চিকিৎসাপত্র ও রিপোর্ট দেখে ওই যুবকের পিত্তথলির অস্ত্রোপচার করেন টাঙ্গাইল শহরের সোনিয়া নার্সিং হোমের সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. মো. তুহিন তালুকদার।
এ ঘটনার পরগত রোববার (২১ মে) দুপুরে ভুল চিকিৎসার শিকার যুবক মো. পারভেজ প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বুয়ালী এলাকার আ. কাদের শেখের ছেলে মো. পারভেজ পেটের প্যানক্রিয়াজের ব্যথা নিয়ে গত ২৭ এপ্রিল টাঙ্গাইল সোনিয়া নার্সিং হোমের সার্জারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো. তুহিন তালুকদারের কাছে যান। পরে ওই চিকিৎসক পারভেজকে দেখে আল্ট্রাসনোগ্রাম ও এক্সরে করানোর পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযারী ওই নার্সিং হোম থেকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিপোর্ট চিকিৎসককে দেখান পারভেজ। পরে চিকিৎসক রিপোর্ট দেখে তাৎক্ষণিক অপারেশনের কথা জানান।
চিকিৎসকের কথায় ওই দিনই পারভেজের পেটে অস্ত্রোপচার করে পিত্তথলি কেটে ফেলেন চিকিৎসক তুহিন তালুকদার।
অপারেশনের পর পিত্তথলি তার স্বজনদের দেখালেও কোনো পাথর ছিল না। পরে রোগীর স্বজনদের জানানো হয় কেটে ফেলা পিত্তথলিতে কোনো ক্যান্সারের জীবানু রয়েছে কিনা সেটা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানোর জন্য নার্সিং হোমে রেখে দেন। এরপর সেখানে পারভেজকে আরও কয়েক দিন চিকিৎসার পর বকেয়া টাকা আদায় শেষে নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ রোগীকে ছাড়পত্র দেন।
পরে রোগীর স্বজনরা ছাড়পত্র নিয়ে দেখতে পান পারভেজের ভুল চিকিৎসা হয়েছে। পারভেজের স্থানে পারভীন নামের এক নারীর রিপোর্ট দেখে সার্জারি চিকিৎসক তার পিত্তথলি কেটে ফেলেছে। বিষয়টি চিকিৎসক ও নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তারা ভুল স্বীকার করে রোগী ও তার স্বজনদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।
পারভেজের স্ত্রী তামান্না হাসান বিজলি বলেন, চিকিৎসক তুহিন ও নার্সিং হোমের মালিক আবুল কালাম রিজভী ভুল চিকিৎসার জন্য শুধু দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধও করেছেন। তারা নাকি অনেক ক্ষমতাধর টাকা দিয়ে সব ম্যানেজ করে ফেলবেন।
পারভেজ আরেও বলেন, আমার রিপোর্টগুলো ডাক্তার দেখার পর জানান পিত্তথলিতে পাথর রয়েছে এবং প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগ ধরা পড়েছে। দ্রুত অপারেশন না করা গেলে পিত্তথলির পাথর হার্টে চলে যাবে। অপারেশনের পর ব্যথা না কমায় অন্য এক ক্লিনিকে চিকিৎসক আহসান হাবিবের কাছে যাই। তিনি আমার রিপোর্ট দেখে জানান আমার পিত্তথলির যে সমস্যা সেটা না কেটেই চিকিৎসা করা যেত।
তিনি আরও বলেন, অপারেশনের পর আমার স্বজনদের পিত্তথলিতে পাথর দেখাতে পারেননি চিকিৎসক।
সোনিয়া নার্সিং হোমের মালিক আবুল কালাম রিজভী বলেন, সঠিকভাবেই পিত্তথলির অপারেশন হয়েছে ওই রোগীর। তবে রোগী পারভেজের নামের স্থলে পারভীনের নাম চলে এসেছে। এছাড়া বায়োপসির জন্য রাখা পিত্তথলির যে পাথরটা সেটা ক্লিনিক থেকে হারিয়ে যাওয়ার কারণে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে রোগী ও তার স্বজনদের কাছে। সেদিন পাঁচটি অপারেশন হয়েছিল নার্সিং হোমে। এর মধ্যে অনাকাঙ্খিত এই ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে ডা. তুহিন তালুকদারের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এরপর তাকে খুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।