মো: আব্দুল বাতেন বাচ্চু,
কারও মাথায় কুলা, হাতে বোতল। পানিতে ভেজা শরীরে গান গাইছেন—আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে তুই। গানের তালে তালে নেচে বৃষ্টির আমন জানাচ্ছেন। শিশু, কিশোর এমনকি মধ্য বয়স্করাও শামিল হয়েছেন এই কার্যক্রমে।
আজ মঙ্গলবার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের গাজীপুর গ্রামে এবং
তেলিহাটি ইউনিয়নের তালতলী গ্রামে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনায় জারিগান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সী মানুষেরা কুলা, ডালা মাথায় নিয়ে বিভিন্ন বাদ্য যন্ত্রের তালে তালে গানের সঙ্গে নেচে বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন। বাড়ি উঠানে গেলেই বাড়ির মালিক পানি দিয়ে তাঁদের ভিজিয়ে দিচ্ছেন। ঢোলী পানি থেকে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে ঢোল বাজাচ্ছে। প্লাস্টিকের বোতল, সিলভারের হাঁড়ি-পাতিল বাজিয়ে গান গাইছেন।
জারিতে অংশ নেওয়া গাজীপুর গ্রামের কূষক নিজাম উদ্দিন বলেন আগের দিনে দেখতাম জারি গান করিলে বূষ্টি হত তাই সকলে মিলে বূষ্টির আশায় শুরু করেছি।
জারিতে অংশ নেওয়া কৃষক মানিক মিয়া বলেন, ‘আমরা ছোটকালে দেখতাম কয়েক সপ্তাহ বৃষ্টি না হলে বাপ-চাচারা এলাকার শিশু, তরুণদের নিয়ে সন্ধ্যা হলেই বেড়িয়ে পড়ত মেঘের জারিগান গাইতে। আশপাশের কয়েকটি পাড়া মহল্লার ঘুরে জারিগান শেষে বাড়ি ফিরত চাল-ডালসহ নানান ধরনের সবজি নিয়ে। এরপর এগুলো দিয়ে পরের দিন রাতে সবাই মিলে বনভোজন করত।’
‘বহুদিন ধরে বৃষ্টির দেখা নাই। ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। তাই পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে মেঘের জারিগান করলাম। বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহকে ডাকলে তিনি শুনে, ইনশা আল্লাহ বৃষ্টির দেখা পাব।’ বলেন কৃষক মানিক মিয়া।
কলেজ শিক্ষার্থী সজিব আকন্দ বলেন, ‘পরিবেশে পরিবর্তন হচ্ছে বৃষ্টি না হওয়াতে। পূর্ব পুরুষের দেখানো পথে হাঁটার মতো আজ বৃষ্টির জন্য জারিগান করলাম। যা মেঘের জারি নামে পরিচিত। গ্রামে আগে অনেক বেশি হতো একটু খরা দেখা দিলে। মেঘের জারি গান গেয়ে ৩ মণ চাল ওঠানো হয়। চালগুলো খুশি হয়ে পাড়ার লোকেরা দিয়েছে। এগুলো দিয়ে রাতে বনভোজন করব সবাই মিলে।’
মেঘের জারিতে অংশ নেন লিমন, আদিত্য, তন্ময় মোল্লা শরিফ, ইমরান আল নাঈম, বাউল শিল্পী খোকন, রুকনুজ্জামান রাজিব, ফারুক, আক্তার হোসেন, নুরল ইসলাম, শফিকুল ইসলামসহ গ্রামের বেশ কয়েকজন শিশু।
তালতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূরুল্লাহ বলেন, মেঘের জন্য জারি গান এটি গ্রাম বাংলার একটি চিরাচরিত ব্যবস্থা। গত কয়েক বছর কোথাও চোখে পড়েনি। এত দিন গ্রামের মানুষ এটা মনে রেখেছে, এটা আমার কাছে ভালো লাগছে। সবচেয়ে বেশি আনন্দের বিষয় বর্তমান প্রজন্মের ছেলেরা তাদের পূর্ব পুরুষেদের কর্ম মনে রেখেছে।