নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাজীপুরের শ্রীপুরে সড়কে অতিরিক্ত চাঁদাবাজি ও পুলিশি হয়রানি বন্ধের দাবিতে সোমবার বিক্ষোভ করছেন প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের মালিক ও চালকেরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকাগামী শতাধিক যাত্রী। মালিক ও চালকদের অভিযোগ, প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন লিমিটেডের আহ্বায়ক কমিটি প্রতিটি বাস থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে চাঁদার পরিমাণ ও পুলিশি হয়রানিও বেড়েছে বহুগুণ।
শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার, মাওনা, বরমী ও ত্রিমোহনী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, প্রভাতী বনশ্রী বাসমালিক ও চালকেরা বাস বন্ধ করে অতিরিক্ত চাঁদাবাজি ও পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন। এতে এসব বাসস্ট্যান্ড থেকে চলাচলকারী ঢাকাগামী যাত্রীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। অনেককে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে বাসের জন্য।
মালিক ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি বিনা রিসিটে প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডে এই পরিবহনের আহ্বায়ক কমিটির নেতারা অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। অপর দিকে পুলিশের সঙ্গে বোঝাপড়া না করার কারণে বেড়েছে হয়রানিও।
প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের বাসমালিক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন লিমিটেডের আহ্বায়ক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহমেদ জৈনা বাজার, বরমী বাজার, ত্রিমোহনী ও মাওনা চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ড থেকে তাঁদের লোকজন দিয়ে চাঁদা নিচ্ছেন। চাঁদা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বোঝাপড়া করার কথা, কিন্তু তাঁরা সেটি করছেন না। এতে পুলিশ ক্ষিপ্ত হয়ে হয়রানি করছে। বিনা কারণে মামলা দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের শতাধিক বাস চলাচল করে ঢাকা অভিমুখে।
প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের আরেক বাসমালিক আবুল কালাম অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রতিদিন গাড়িপ্রতি ১ হাজার ৭০০ টাকা চাঁদা দিতে হয় বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে। এর পরিমাণ গত এক মাস আগেও খুবই কম ছিল। হঠাৎ করে প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন লিমিটেডের আহ্বায়ক কমিটির নেতারা এর পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর প্রতিবাদে শ্রীপুর থেকে সকল প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন চলাচল বন্ধ করে আন্দোলন করছি। সমাধান না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।’
বাসচালক মো. রিপন মিয়া বলেন, জৈনা বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু চাঁদাবাজি। শেষ হয় ঢাকায় গিয়ে। জৈনা বাজার বাসস্ট্যান্ডে ৫০, মাওনা চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ডে ৫০, ত্রিমোহনী বাসস্ট্যান্ডে ২৫০, বরমী বাসস্ট্যান্ডে ২০০, গাজীপুর বাসস্ট্যান্ডে ৭০ ও সর্বশেষ গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ডে ১ হাজার ১৩০ টাকা চাঁদা দিতে হয় বিনা রিসিটে। দিন শেষে মালিক-কর্মচারীদের কিছু থাকে না। চাঁদাবাজির জন্য আমরা অতিষ্ঠ। সঙ্গে পুলিশি হয়রানি তো রয়েছেই।’
‘কয়েক সপ্তাহ ধরে পুলিশ বিনা কারণে মামলা দিচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, নেতারা পুলিশের সঙ্গে বোঝাপড়া করছে না।’ যুক্ত করেন বাসচালক রিপন মিয়া।
অতিরিক্ত চাঁদাবাজি ও পুলিশি হয়রানির বন্ধের দাবিতে বাস মালিক-চালকদের বিক্ষোভ
অতিরিক্ত চাঁদাবাজি ও পুলিশি হয়রানির বন্ধের দাবিতে বাস মালিক-চালকদের বিক্ষোভ।
ত্রিমোহনী বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় লোকমান হোসেন নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকায় যাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ডে এসে জানতে পারলাম বাস চলাচল বন্ধ। বিড়ম্বনায় পড়েছি। অন্য কোনো পরিবহনে মহাসড়ক পর্যন্ত যেতে হবে। এরপর আরেকটি বাসে ঢাকায় যেতে হবে।
এই যাত্রী আরও বলেন, ‘চাঁদাবাজদের জন্য বাড়ির পাশে বাসস্ট্যান্ড পেয়েও সুখ পেলাম না। কয়েক দিন পরপরই চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে বাস বন্ধ হয়। তাতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষের।’
প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন লিমিটেডের আহ্বায়ক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহমেদ চাঁদাবাজির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি যে কয়েকটি বাসস্ট্যান্ডে টাকা তুলি সেগুলো দিয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে বোঝাপড়া করি। গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত পুলিশ হয়রানি করে না। এরপর অন্য নেতারা দেখেন। আর এটা চাঁদাবাজি বলা যাবে না। এই টাকা দিয়ে লাইনম্যান ও সুপারভাইজারের বেতন দেওয়া হয়। বেশি টাকা নেওয়ার বিষয়টি ঢাকার নেতারা বলতে পারবেন।’
মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কংকন কুমার বিশ্বাস দেশ টিভি বাংলার কে বলেন, ‘শ্রীপুরে বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজির বিষয়ে আমাকে কেউ জানায়নি। তবে আজ বাস বন্ধ করে রেখেছে মালিকপক্ষ। আর পুলিশি হয়রানির বিষয়টি আমার নির্ধারিত সীমানার মধ্যে নয়। বিষয়গুলোর খোঁজ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’