মোঃ আব্দুল বাতেন বাচ্চু,
প্রতিবেশীর বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছে আগুনে ঘর পুড়ে যাওয়া পরিবারটি
গাজীপুরের শ্রীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে একমাত্র বসতঘরটি আগুনে পুড়ে গেছে। স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে প্রতিবেশীর খোলা বারান্দায় দিন কাটাচ্ছেন এক পোশাকশ্রমিক। আগুনে শুধু বসতঘর নয় সহায়–সম্বল সবকিছুই কেড়ে নিয়েছে। স্থানীয়দের কিছু সহযোগিতা পেলেও এখনো সরকারি কোনো পায়নি বলে জানিয়েছে পরিবারটি।
সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুরে উপজেলার ২ নং গাজীপুর ইউনিয়নের গাজীপুর পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল বারেকের ছেলে মাহবুবুল আলম শামীম একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। তাঁর বসতবাড়িটি গত রোববার বিকেলে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শুধু থাকার ঘর নয়, ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। রান্না করে খাওয়ার মতো হাঁড়িপাতিল, জামাকাপড় কিছুই অবশিষ্ট নেই। এতে অবুঝ দুই শিশুসহ পরিবারের চার সদস্য প্রতিবেশীর খোলা বারান্দায় দিনে কাটাচ্ছেন। চারপাশ খোলা বারান্দাটিতে আশপাশের মানুষ একটি পলিথিনের ছাউনির মতো টাঙিয়ে দিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে বারটার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশী আসাদুল্লাহর একটি মাটির ঘরের বারান্দায় দুই শিশু সন্তান নোমান (৫) ও ইকরা (৩) নিয়ে জেগে রয়েছেন পোশাক শ্রমিক শামীম ও তাঁর স্ত্রী। একটি পাটি মাটিতে বিছিয়ে একটি কাতার ওপর শুইয়ে রেখেছেন শিশু দুটিকে।
বারান্দায় বসে কথা হয় ভুক্তভোগী শ্রমিক মাহবুবুল আলম শামীমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত ১৬ জুলাই আমার স্ত্রী নাসিমা বেগম ঘরে বসে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে রান্না করছিলেন। রান্না বসিয়ে আমার স্ত্রী বাচ্চার কান্না শুনে ঘরের বাইরে আসে। তখন হঠাৎ করে সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়। বিকট শব্দ হয়ে ঘরের ভেতর আগুন জ্বলতে থাকে। এক নিমেষেই সমস্ত ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে ঘরটা পুড়ে যায়। ঘরের ভেতর থাকা সমস্ত আসবাবপত্রও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
এই পোশাক শ্রমিক আরও বলেন, ‘আগুনে বসতঘরসহ সব পুড়ে গেলেও আমার দুই অবুঝ শিশুকে বাঁচিয়ে রেখেছে আল্লাহ। ওঁরা এ সময় বাড়ির বাইরে খেলাধুলা করছিল। তাদের কান্নার শব্দ শুনে আমার স্ত্রী দৌড়ে বাইরে আসায় সেও প্রাণে বাঁচতে পারে। তবে অবুঝ দুই শিশু সন্তান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে। খেজুর পাতার পাটিটাও মানুষের দেওয়া। বাচ্চাদের গায়ের জামাকাপড়, আমার জামাকাপড় ও স্ত্রীর পড়নের শাড়ি সবই মানুষের দান। খুবই কষ্ট সময় কাটছে। কী করে ঘরের ওপর ঢেউটিনের চাল দেব? কোথায় পাব এত টাকা। এ নিয়ে চারপাশে অন্ধকার দেখছি। দিনে যেমন-তেমন রাত হলেও খুবই কষ্ট। আমার তেমন সহায় সম্বল নেই যে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘরবাড়ি ঠিক করব। বাবার রেখে যাওয়া ভিটেমাটি একমাত্র সম্বল। মানুষ পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করলেও কষ্ট লাঘব হবে আমার পরিবারের। আপনাদের মাধ্যমে সহযোগিতা চাচ্ছি।’
মাহবুবুল আলম শামীমের স্ত্রী নাসিমা বেগম বলেন, ‘আল্লাহ রক্ষা করছে অবুঝ দুই শিশু সন্তান এবং আমাকে। একটু পর ঘর থেকে বের হলে আমি আগুনে পুড়ে ছাই হতাম। কিন্তু দেখেন কত কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। অবুঝ শিশুদের আঁচলের নিচে নিয়ে সারা রাত জেগে থাকছি। চোখে ঘুম আসলেও একটু পরপর চোখে পানি দিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। কখন ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। তখন দৌড়ে কারও ঘর আশ্রয় নিতে হবে। এ জন্য ঘুমানো হয় না কয়েক রাত, মানুষের দেওয়া ডালভাত খেয়ে কোনো মতে চলছে।’
ভুক্তভোগীর প্রতিবেশী আসাদ উল্লাহ বলেন, ‘গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি আজ খুবই অসহায়। আমরা আশপাশের মানুষ তাদের যতটুকু পারছি সহায়তা করছি। কিন্তু একটি বসতঘর নির্মাণের জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। তাই ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক শ্রমিকের বসতঘরটি নির্মাণের জন্য সবার এগিয়ে আসা উচিত। খোলা আকাশের নিচে, প্রতিবেশীর খোলা বারান্দায় দিন কাটাচ্ছে ওঁরা।’
শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার ইফতেখার হোসেন রায়হান চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ওই পরিবারটির বসতঘরে আগুন লাগার খবর শুনেছি।
গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল হক মাদবর বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য সরকারি বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হবে। তাদের ঘর নির্মাণ করার জন্য স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ওঁরা খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে এ বিষয়টি আমার জানা ছিল না। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পরপরই ঘটনাস্থলে আমি গিয়েছি।’
শ্রীপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুহীতুল ইসলাম দেশ টিভি বাংলা কে বলেন, ‘বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। এ বিষয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে খোঁজ খবর নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’