নিউজ ডেস্ক:
রংপুরের তারাগঞ্জ থানা পুলিশের বিরুদ্ধে আশরাফুল ইসলাম নামে এক সাংবাদিককে বাসা থেকে ধরে এনে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমানকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।
গত কাল মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) ইফতে খায়ের আলম।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক আশরাফুল ইসলাম দৈনিক সংবাদের তারাগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি। তিনি প্রায় এক দশক ধরে দৈনিক সংবাদে কর্মরত। পরে আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন তিনি।
আশরাফুল ইসলামের দাবি, যৌতুকের মামলায় দণ্ডিত আসামিকে গ্রেপ্তার না করায় পুলিশ সুপারের কাছে তারাগঞ্জ থানার ওসির বিরুদ্ধে এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ দেন। ওই অভিযোগ তুলে ধরে খবর প্রকাশ করায় ওসি তাকে হেনস্তা করতে বাসা থেকে ধরে এনে থানায় মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। পরে আদালত তার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
এ ঘটনার খবর ঢাকা পোস্টসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে রংপুরসহ সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন।
তদন্তে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হওয়ার পর অবশেষে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজির নির্দেশে তারাগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমানকে স্ট্যান্ড রিলিজ দিয়ে দিনাজপুর পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করার আদেশ দেওয়া হয়।
রংপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) ইফতে খায়ের আলম জানান, তারাগঞ্জ থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমানকে দিনাজপুরে বদলি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক আশরাফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তারাগঞ্জ থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান এর আগেও তারাগঞ্জের ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি রংপুর সদর কোতোয়ালি থানা থেকে পুনরায় ওসি হিসেবে তারাগঞ্জ থানায় যোগদান করেন।
সম্প্রতি যৌতুকের একটি মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মমদেল হোসেনকে আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও গ্রেপ্তার না করায় ওই যৌতুক মামলার বাদী পুলিশ সুপারের কাছে ওসির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই লিখিত অভিযোগের সূত্র ধরে গত ১২ আগস্ট দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ৪র্থ পাতায় একটি খবর প্রকাশিত হয়। যার শিরোনাম ছিল ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেপ্তার না করায় ওসির বিরুদ্ধে এসপির কাছে অভিযোগ’।
আশরাফুলের দাবি, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ার খবর প্রকাশ হলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারাগঞ্জ থানার ওসি বিভিন্নভাবে ওই মামলার বাদীকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ খবর প্রকাশ করায় তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ওসি মোস্তাফিজার রহমান।
অন্যদিকে গত ২৪ আগস্ট রংপুর নগরীতে নারী নির্যাতন বিরোধী একটি কর্মশালায় অংশ নেন সাংবাদিক আশরাফুল ইসলাম। ওই কর্মশালায় তিনি তারাগঞ্জের আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ দুটি স্থানে দুই শিশুকে ধর্ষণ করার চেষ্টার ঘটনায় পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ তুলে ধরে বক্তব্য দেন। বিষয়টি বিভিন্ন মারফতে ওসি জানতে পারেন।
এরই মধ্যে গত ৩০ আগস্ট জমি নিয়ে পূর্ব বিরোধের ঘটনায় আশরাফুলের চাচাসহ ছোট ভাইদের সঙ্গে হাতাহাতি আর সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এর তিনদিন পর ২ সেপ্টেম্বর সকালে সাংবাদিক আশরাফুল ইসলামকে তার বাসা থেকে পুলিশ আটক করে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিকের দাবি- তাকে থানায় প্রায় দুই ঘণ্টা আটক রেখে মারামারির ঘটনার কথা উল্লেখ করে মামলা রেকর্ড করার পর বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়। ওই দিনই তিনি জামিন আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। কারণ মামলার ১৩ জন আসামির মধ্যে শুধুমাত্র তাকে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি নিয়ে তার আইনজীবী বিচারকের কাছে যথাযথভাবে তুলে ধরেন।