শ্রমিক আন্দোলনে উত্তাল গাজীপুর কারখানায় ভাঙচুর আগুনঃপুলিশ ফাঁড়িতে হামল
মোঃ আব্দুল বাতেন বাচ্চু:
কালিয়াকৈরে পুলিশ ফাঁড়িতে পোশাক শ্রমিকদের হামলা, মহাসড়ক অবরোধ
বেতন ভাতা বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিক আন্দোলনে উত্তাল হয়ে পড়েছে গাজীপুর। কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় তারা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাক বাজার এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায় পোশাক শ্রমিকরা।
এর মধ্যে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক বাজার এলাকায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করে এবং মহাসড়কে ১০-১২টি যানবাহন ভাঙচুর করে বলে জানান কালিয়াকৈর থানার ওসি আকবর আলী খান।
এসময়ে শিল্প পুলিশ ও থানা পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শতশত শ্রমিক পুলিশকে ধাওয়া করে।
পুলিশ আত্মরক্ষার্থে মৌচাক বাজার এলাকায় অবস্থিত কালিয়াকৈর থানাধীন পুলিশ ফাঁড়িতে অবস্থান নেয়। এ সময়ে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে ফাঁড়িতে হামলা চালায়। ফাঁড়ির গেট, গ্লাস এবং সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে।
অপরদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সফিপুর, পল্লী বিদ্যুৎ ও চন্দ্রা এলাকায় শ্রমিকরা অগ্নিকাণ্ড ঘটায়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা যানবাহন, হাসপাতাল, দোকানপাট ও লাসানিয়া হোটেল ভাঙচুর করে।
এর আগে উপজেলা সফিপুর এলাকায় তানহা হেলথকেয়ার নামে একটি হাসপাতলে ব্যাপক ভাংচুর করে। পরে পাশে থাকা একটি পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেন। এছাড়াও উপজেলার চন্দ্র এলাকায় ওয়ালটন কারখানার সামনে ওয়ালটনের একটি প্লাজায় শ্রমিকরা হামলা চালায়। এক পর্যায়ে প্লাজার বাহিরে দাঁড়ানো একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর দুটি ইউনিট পুলিশের সহায়তায় ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন রায়হান চৌধুরী জানান, সফিপুর এলাকায় লিডার গার্মেন্টসে আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ওই পথে রওনা দেন। কিন্তু শ্রমিকরা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি অবরোধ করে রাখে।
কালিয়াকৈর থানার ওসি আকবর আলী জানান, “কয়েক হাজার শ্রমিক মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে।
”শিল্প পুলিশ ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মাসের ২৩ অক্টোবর থেকে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ও তেলিচালা এলাকার কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে অবরোধ শুরু করে। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে শ্রমিক বিক্ষোভ গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী নাওজোর, ভোগরা, চান্দনা চৌরাস্তাসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার সকাল থেকে শ্রমিকরা মৌচাক ও তেলিচালা এলাকায় মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
এছাড়া গাজীপুর মহানগরের চান্দরা চান্দনা চৌরাস্তায় এলাকায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। বেতন বাড়ানোর দাবিতে শ্রমিকরা নানা ধরনের স্লোগান দেয়।
বিএনপির অবরোধের মধ্যে স্বল্প পরিমাণে যানবাহন চলাচল করলেও শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সেগুলো চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অপরদিকে সোমবার গাজীপুরের মহানগরীর কোনাবাড়ী, ভোগড়া, বাসন সড়ক, চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভ চলায় মঙ্গলবার অধিকাংশ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার সকালে কোনাবাড়ি এলাকায় দেখা গেছে, কোনাবাড়ী এলাকার অন্যতম বড় কারখানা তুসুকা গ্রুপের প্রধান ফটকে বড় একটি ব্যানার ঝুলছে। তাতে লেখা রয়েছে অনিবার্য কারণবশত কারখানার সব কার্যক্রম আগামী ২ অক্টোবর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
একই এলাকার এম এম নেটওয়ার্ক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে শুধু মঙ্গলবারের জন্য। এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি কারখানার সামনে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখা গেছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারখানার এক কর্মকর্তা বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের কারণে কারখানা সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই খুলে দেয়া হবে।
গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি এলাকার তুসুকা গ্রুপের নিটিং সেকশনের শ্রমিক শরিফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের বেতন দেয়া হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এই টাকায় আমাদের সংসার চলছে না। ঘরভাড়া দেয়ার পর যা থাকে তা দিয়ে কোনো ভাবে বেচে আছি। এখন আমাদের দাবি সর্বনিম্ন বেতন ২৩ হাজার টাকা দিতে হবে। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলতে থাকবে।”
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, “শ্রমিকদের মজুরি বোর্ড নিয়ে সরকার কাজ করছে। এখনও সেটি চূড়ান্ত হয়নি। যখন মজুরি চূড়ান্ত করে ঘোষণা দেওয়া হবে তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিব সেটি মানব-কি মানব না।
“কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে নন-ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তুলছে বলে অভিযোগ করেন এই শ্রমিক নেতা।
গাজীপুরের বাসন থানার ওসি আবু সিদ্দিক বলেন, “শ্রমিকরা বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে মিছিল করে। অধিকাংশ কারখানা বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের সংখ্যা কিছুটা কম। তাদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।