নিজস্ব প্রতিবেদক:
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তাঁর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করার মামলায় সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ রোববার ঢাকার অতিরিক্ত প্রধান মহানগর হাকিম মাহবুবুল হক তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এই মামলার দুটি ধারায় সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত মাহমুদুর রহমান সকালে আত্মসমর্পণ করেন। একই সঙ্গে তাঁর আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ আজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘শাস্তির পরিমাণ অনুযায়ী বিচারিক আদালতের এখতিয়ার না থাকায় জামিন দেননি। আমরা আপিল করব। মিথ্যা মামলায় সাজা হয়েছে। আশা করি আমরা আপিল করলেই জামিন পাব এবং এই মামলা থেকে অচিরেই খালাস পাবেন মাহমুদুর রহমান।’
মাহমুদুর রহমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকায় তিনি এই মামলায় পলাতক হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত হন। গত বছরের ১৭ আগস্ট মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর।
সাজাপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন—বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তাঁর ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।
দণ্ডবিধির দুটি ধারায় একটিতে পাঁচ বছর, অপরটিতে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা পরিশোধ না করলে প্রত্যেককে আরও তিন মাসের কারাভোগ করতে হবে বলে রায়ে বলা হয়। রায় ঘোষণার সময় সবাই পলাতক ছিলেন।
রায়ে আরও বলা হয়, সাজাপ্রাপ্ত সবাই পলাতক থাকায় তাঁরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর অথবা আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর রায় কার্যকর হবে।
মামলার অভিযোগ ছিল—২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যেকোনো সময় থেকে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় একত্রিত হয়ে পরস্পর যোগসাজশে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। ওই ঘটনায় ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন।
২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০২২ সালের ১৩ নভেম্বর সজীব ওয়াজেদ জয় আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেন। তাঁকে হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি।
সজীব ওয়াজেদ জয় তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, সাংবাদিক শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন এবং বিএনপির নেতৃস্থানীয় কয়েকজন তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। তিনি বিষয়টি ‘ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস’ থেকে জানতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের একজন সদস্যকে শফিক রহমান, মাহমুদুর রহমান, মামুন ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান এবং বিএনপির আরেক নেতা মামুনের ছেলে রিজভী আহমেদ ওরফে সিজারের মাধ্যমে ঘুষ দেন।
তিনি জানতে পারেন, এফবিআইয়ের ওই সদস্যকে ৪০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন সিজার। সজীব ওয়াজেদ জয়ের গতিবিধি লক্ষ রাখার এবং প্রতিটা মুহূর্তের খবরাখবর দেওয়ার জন্য এফবিআই সদস্যকে ঘুষ দেওয়া হয়। জয় যত দিন থাকবেন, তত দিন প্রতি মাসে আরও ৩০ হাজার ডলার করে ঘুষ দেওয়ার চুক্তিও হয়েছিল ওই এফবিআই সদস্যের সঙ্গে।
জয় আরও বলেন, এফবিআই সদস্যকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে মামলা হয়। ওই মামলায় জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার ও এফবিআইয়ের এক সদস্যকে সাজা দেওয়া হয়।
এসব ঘটনার পরে বাংলাদেশে এই মামলা হয়। এই মামলা হওয়ার পর সাংবাদিক শফিক রেহমানের ইস্কাটনের বাসা থেকে এই হত্যার ষড়যন্ত্রের বেশ কিছু আলামত উদ্ধার হয় বলেও মামলায় বলা হয়। বিচার চলাকালে এই মামলায় মোট ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।
এদিকে আত্মসমর্পণের আগে মাহমুদুর রহমান বলেছেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আজকে আত্মসমর্পণ করেছি। এ লড়াই অব্যাহত থাকবে। এই মামলা পুরোটাই সাজানো। তৎকালীন সরকার ফ্যাসিবাদব্যবস্থা চালু রাখতে আমার বিরুদ্ধে এই মামলা করে।